ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে ঐক্য চাই : জামায়াত আমীর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:২৬:১২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আর জুলুম নয়, আমানতের খেয়ানত নয়, বিভেদ নয়, ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে ঐক্য চাই।’ শুক্রবার বেলা ১১টায় নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতের বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এত মানুষ জীবন দিয়েছে কেন, তারা চেয়েছে বৈষম্যহীন সমাজ। তারা বলেছে, আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ১০ মাসের সন্তান থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ- সবাই জুলাই আন্দোলনে নেমেছিল। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিল। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দলের দেশপ্রেমিক নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। নির্বাচন তাদের জন্য, যারা দেশ ও দেশের মানুষকে আমানত মনে করে। আমরা চাই অতিদ্রুত সংস্কার করে বর্তমান সরকার দেশে একটি নির্বাচন দিক।
তিনি বলেন, কেউ কেউ প্রশ্ন করেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ফিরবে কি না, কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আর ফিরে আসার সুযোগ নাই। জামায়াতের আমীর বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে দফায় দফায় যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা আমানতের খেয়ানত করেছে। কম-বেশি সবাই এদেশের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, জুলুম করেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে গত ১০ বছর। পট পরিবর্তনের পর নেতাকর্মীদের বলেছি, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ, সবাই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আন্দোলনে হতাহতদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমরা যুবকের হাতকে দেশ গড়ার হাতে পরিণত করতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিদেশী বন্ধু চাই, প্রভু চাই না। আমরা পিন্ডির হাত থেকে মুক্ত হয়েছি অন্য কারো হাতে যাওয়ার জন্য নয়। কারো লাল চোখ আমরা দেখতে চাই না। আমরা বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ গড়তে চাই। আমরা বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। এদেশের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই দেশের গর্বিত নাগরিক।’
জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সাম্যের, তবে এটার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। তাহলেই আমরা সত্যিকারের স্বাধীন দেশের নাগরিক হবো। সাম্যের বাংলাদেশ গঠনে জামায়াত ইসলামী মানুষের দোয়া, ভালোবাসা ও পরামর্শ চায়, চায় ইতিবাচক সমালোচনা।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করবে। নারীকে কখনো নারী বলে কাজের বাইরে রাখা হবে না। নারী তার প্রাপ্য সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানরা এমনভাবে শিক্ষিত হবে যেন শিক্ষাজীবন শেষে একটা চাকরির জন্য কোনো মামা-খালুর পিছনে দৌঁড়াতে না হয়। শিক্ষাজীবন শেষে হওয়ার আগে কাজই আমাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে যাবে। এ দায়িত্ব পালন করবে জামায়াতে ইসলামী। আমরা এমন শিক্ষা চাই, যেন আমাদের সন্তানদের মনে মমত্ববোধ, দেশাত্মবোধ ও মানবীয় গুণাবলীতে অনন্য হয়ে ওঠে। আমরা চাই তারা যেন সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠে।
জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ড. মীর নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন এবং মোবারক হোসেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী তাদের সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, যা দেশের জাতীয় বাজেটের পাঁচ গুণ। আওয়ামী লীগ তাদের আমলে জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, বাড়িঘর ও দলীয় অফিস লুটপাট করে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শুধু জামায়াত নয়, দেশপ্রেমিক প্রতিটি দল ও সাধারণ মানুষের ওপরেও এমন নির্যাতন করেছে। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে। দেশের হাজারো আলেম-ওলামাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে টেনে হেঁচড়ে জেলে নিয়ে গেছে। বিনা বিচারে হত্যা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ইজ্জত দেয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে সম্মান দেন, আবার প্রয়োজনে কেড়ে নেন। গণভবনে সেদিন রান্না হয়েছিল, কিন্তু সেই খাবার তাদের কপালে লেখা ছিল না।’
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জামায়াত আমীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের নামে তিন তিনবার তা-ব চালিয়েছে। তারা নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। যারা জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না, তাদের আবার কিসের নির্বাচন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এই দেশের ১৮ কোটি মানুষকে প্রতিপক্ষ ভেবে তাদের শাসন আমলে অমানুসিক নির্যাতন করেছে। মানুষের জন্য তাদের মায়া ভালোবাসা ছিল না বলেই আন্দোলনের সময় নির্বিচারে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে। জামায়াত এই আন্দোলনের সকল শহীদদের বাড়িতে পৌঁছাতে চেষ্টা করেছে। সকল আহতদের পাশে সাধ্য মতো দাঁড়িয়েছে।’