আল বিদা মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০২৫, ১২:১০:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রমজান বিশ্ব মুসলিমের জন্য অপার সম্ভাবনার এক দ্বার। যে দ্বার দিয়ে তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। রমজানের সাথে ঈমানদারদের আবেগ জড়িত। অনেকে রমজানকে স্বাগত জানাবার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আবার রমজানের বিদায়ে হয়ে যান আবেগে আপ্লুত। যেন কত কাছের জন বিদায় নিচ্ছে। এটাই তো ঈমানদারদের চরিত্র। যুগে যুগে ওলি আউলিয়ারা এভাবেই রমজানকে আপন করে নিয়েছেন। আল্লাহও রমজানকে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছেন। যারা রমজানের রোজা রাখেন তাদের জন্য নিজেই পুরস্কার বলে ঘোষণা দিয়েছেন। রমজানে অজ¯্র পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর রহমত, বরকত, মাগফিরাত জরিয়া।
রমজানে মুসলমানদের মাঝেও একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সবাই ইবাদাতে আলাদাভাবে মশগুল হয়ে পড়েন। বেশি করে ইবাদাতের জন্য আলাদা করে সময় বের করেন। মসজিদগুলোতে মুসল্লীদের পরিমাণ বেড়ে যায়। এটা অবশ্যই একটি ভালো দিক। রমজান তো এসেছেই আমাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে। আমাদের জীবনধারায় ত্যাগ আর সংযমের মাধ্যমে একটা নিয়মতান্ত্রিকতা নিয়ে আসতে। কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় রমজানের শুরুতে অনেকের মধ্যে ঈবাদতের জন্য যে আলাদা আগ্রহ দেখা যায় তা রমজান কয়েকদিন গেলে পরে যেন কমে যায়। বিশেষকরে সাতাশ রোজার পর মসজিদগুলোতে মুসল্লীদের সংখ্যা অনেক কম দেখা যায়। আর ঈদের আগেরদিন এশার নামাজে বা ঈদের দিন ফজরের নামাজে অনেক মসজিদে এক কাতারও ভালোভাবে পুরো হয়না। এটা কোনোভাইে সুন্দর দেখায় না, যারা রমজানের শুরুতে ইবাদাতের জন্য মশগুল ছিলাম, মসজিদমুখীতার জন্য আন্তরিক ছিলাম। রমজানে আমরা ইবাদাত বন্দেগীতে আলাদভাবে সময় দিয়ে এটাই প্রমাণ করেছি আমরা চাইলে আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারি। আমরা চাইলে আমাদের জীবনকে আল্লাহর রঙে সাজাতে পারি। এটা আমাদের চাওয়া পাওয়ার উপর নির্ভর করে। আর আমরা যদি আমাদের জীবনকে আল্লাহর রঙে সাজাতে চাই তো আল্লাহ তো আমাদের সাথেই আছেন। সুতরাং আমাদের এ নিয়ে খেয়াল করা দরকার রমজানে আমরা যে সুন্দর একটা অভ্যাস গড়ে তুলি তা যেন সারাবছর আমরা জারি রাখবার চেষ্টা করি। রমজান যাবার সাথে সাথে যেন আমাদের ইবাদতি মনও বিদায় না নেয়। রমজানে যেভাবে আল্লাহর নিয়ম মানার সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হয় এটা কিন্তু আমাদেরই তৈরি। আমরাই সতর্কভাবে এ পরিবেশ তৈরি করি। তাই আমরা যদি চাই তো রমজান ছাড়াও সারাবছর এ সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারি। মূলকথা হলো আমাদের আগ্রহ। অনেকে বলতে পারেন রমজানে তো মূল শয়তান বন্দী থাকে তাই এই পরিবেশ হয়ে থাকে। এটা যক্তির জন্য ধরা যায় কিন্তু বাস্তবের সাথে খুব একটা খাপ খায়না। কেননা আমরা যদি ভালো কাজের আগ্রহ মনের ভেতর লালন করি আর সেই অনুপাতে আল্লাহর কাছে শয়তানি কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাই তাহলে আল্লাহ তো আছেনই। শয়তানের তো সে সুযোগ নেই যে আল্লাহর আশ্রয় থেকে মুমিনদের বিপথী করবে। এটাতো শয়তানের প্রতি আল্লাহর চ্যালেঞ্জ যে শয়তান আল্লাহর বান্দাদের বিপথগামী করতে পারবে না।
আর এ নিয়ে তো কুরআনুল কারীমের সূরা হা-মীম সিজদাহ’র ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেই দিয়েছেন, ‘যদি কখনো শয়তানে কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, অবশ্যই তিনি সবকিছু শুনেন, সবকিছু জানেন’।
সুতরাং মুমিনের এ নিয়ে কোনো সংশয় সংকোচের সুযোগ নেই। মুমিনের ইচ্ছাই যতেষ্ট। বাদবাকি আল্লাহর দায়িত্ব। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের রমজানের রোজাগুলো কবুল করুন। আমাদের আমলগুলো কবুল করুন। আমাদের ভুলগুলো মাফ করে দিন। আমাদের সামনের জীবনকে আরো সুন্দর করুন, সমৃদ্ধ করুন, নান্দনিক করুন। রমজানের সুন্দর অভ্যাসগুলো যেনো আমরা সারাবছর অব্যহত রাখতে পারি সেই মনসিকতা, আন্তরিকতা, যোগ্যতা আমাদের নসিব করুন।