ইরানে হামলার ইসরাইলী বাগাড়ম্বর
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০:১০ অপরাহ্ন
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক কূটকৌশলের অংশ হিসেবে ইরানের পারমানবিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু এটা যে একটি নিছক বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছু নয়, এমন অভিমত অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের। এ প্রসঙ্গে প্রায় সকল বিশেষজ্ঞরা একমত যে, নেতানিয়াহুর সরকার ইরানের পরমাণু সক্ষমতাকে ধ্বংস করতে সক্ষম নয় তাদের পারমানবিক স্থাপনাসমূহে হামলার মাধ্যমে।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য হচ্ছে, ‘একমাত্র আমিই ইসরাইলকে রক্ষা করতে পারি।’ উগ্র ইহুদীবাদী প্রচারক নির বেন আর্তজি ও মোশে বেন টোভ এক পর্যায়ে এই বলে প্রচারণা চালান যে, মেসিয়াহ ও মশীহ আসার পূর্ব পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকতে হবে। গত বছর ইসরাইলের পার্লামেন্টে নেসেটে ইসরাইলের লুভাভিচ আন্দোলনের নেতা বেব্বি ¯িœয়ারসনের একটি বইসহ ছবি প্রকাশিত হয়, যে বইয়ে মিয়ারসন ৩০ বছর আগে ভবিষ্যদ্বানী করে গেছেন যে, নেতানিয়াহু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং মেসিয়াহ’র হাতে তার দায়িত্বভার অর্পণ করবেন। এটা ইসরাইলের বিদ্যমান যুদ্ধের পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে। বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘একে তো নাচুনে বুড়ি, তার ওপরে ঢোলের বাড়ি’। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নেতানিয়াহুর পারবিারিক পরিস্থিতি। তার ভাই ইসরাইলের জাতীয় বীর। পিতা রিভিশনিষ্ট জায়োনিজম অর্থাৎ সংশোধনবাদী ইহুদীবাদের একজন অন্যতম প্রবক্তা। রিভিশনিষ্ট জায়োনিজমের মতবাদ হচ্ছে, ইহুদী স্বার্থসমূহ শুধুমাত্র শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমেই সুরক্ষিত হতে পারে। তাই আরবদের সাথে সমঝোতা অসম্ভব এবং ঐতিহাসিক বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসবই নেতানিয়াহু ও তার অনুগামী সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছে ইসরাইলের প্রধান শত্রু ইরানকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নেতানিয়াহু তার ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে গত কয়েক বছর ধরে ইরানের পারমানবিক শক্তির অধিকারী হওয়া সংক্রান্ত হুমকির বিষয়ে জোর দিচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১০-১১ সালে নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাকের সাথে ইরানে হামলার জন্য সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবারও নেতানিয়াহু যখন ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রসমূহে হামলার তোড়জোড় পাঁয়তারা করছেন, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতে সায় দিচ্ছেন না। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের অনীহা সত্বেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইরানে হামলা চালাতে চায় ইসরাইল। জনৈক ইসরাইলী কর্মকর্তা এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আরো দু’জনের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংস্থা রয়টার্স।
ইসরাইলী কর্মকর্তারা তেহরানের পারমানবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকানোর অঙ্গীকার করেছেন। ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যে কোনও আলোচনার মাধ্যমে তার পারমানবিক কর্মসূচী সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। সূত্র মতে, ইসরাইলের হামলা পরিকল্পনার মধ্যে বিমান ও কমান্ডো অভিযানের মিশ্রন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যা-ই হোক, কথায় আছে, যতো গর্জে ততো বর্ষে না। বিমান হামলা চালিয়ে ৪০ বছর আগে ইরাকের পারমানবিক চুল্লি ধ্বংস আর এখন বোমা বর্ষণ করে ইরানের স্থাপনা ধ্বংসের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ইরানের পারমানবিক স্থাপনা বা কেন্দ্রগুলো ছড়িয়ে আছে এই বিশাল দেশটির বিভিন্ন গোপন স্থানে, পাহাড়ের গভীর তলদেশে, ভূ-গর্ভে। একমাত্র স্থল অভিযান চালিয়ে এগুলো ধ্বংস সম্ভব। কিন্তু হাজার মাইল দূরে থেকে এসে ইরানে স্থল হামলা চালানো ইসরাইলের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। আর ইরানের সামরিক শক্তি ও প্রতিরোধ সক্ষমতাও সকল বিচার বিবেচনায়ই একই বড়ো ফ্যাক্টর। তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমতকেই সত্য বলে ধরে নিতে হয়, যা শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে।