ধর্ষণ আতংক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০:২৪ অপরাহ্ন
দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। শিশুও রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষণকারীদের কাছ থেকে। সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত ‘ফের বেড়েছে ধর্ষণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের পর কিছু নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। একটি বেসরকারী সংস্থার তথ্য মতে, গত জানুয়ারী মাসে ২৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারীতে এ সংখ্যা আরো বেশী। চলতি মার্চ মাসেও আশংকাজনক হারে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। একদিনেই ৬টি ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে যে সংখ্যক ঘটনা সামনে আসে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও বেশী বলে সচেতন মহলের অভিমত। তাদের মতে, ২০২০ সালে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়েছিলো। কিন্তু বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় ধর্ষণের কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে গত দেড় দশকে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে, সেটা এখন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে যে সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। কারণ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে, থানা পুলিশ আইন আদালতে ঝক্কি ঝামেলা হবে এ রকম চিন্তা থেকে অনেক ভুক্তভোগী ও তার পরিবার মামলা করতে চান না। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, নৈতিক অবক্ষয় মাদকাসক্তি, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবের কারণে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা গেছে, বেশীর ভাগ ধর্ষণের ঘটনায় প্রভাবশালীরা জড়িত। তারা ঘটনার পর ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে এ ধরনের গুরুতর অপরাধ থেকে রেহাই পেয়ে যান।
মানবাধিকার সংস্থা আসক এর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪১৩ টি। ওই বছর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটে ৭৬ টি। আর ধর্ষণ চেষ্টা হয়েছে ২২৪ টি। এসব ঘটনায় মামলা হয় ৯৯৯টি। ২০২২ সালে এসে ধর্ষণের ঘটনা হ্রাস পায়। ঘটনা ঘটে ৯৩৬টি। ৪৭টি ঘটে ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনা। এরপর ২০২৩ সালে ধর্ষণ আরো হ্রাস পায়। ঘটে ৫৪৬টি ঘটনা। হত্যা করা হয় ৩৩ জনকে। মামলা হয় ৪৩৩ টি। যা-ই হোক, বিগত কয়েক বছরে ধর্ষণের ঘটনা অনেকটা হ্রাস পেলেও চলতি বছরে এসে এ ধরণের গুরুতর অপরাধ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা বিশেষভাবে দায়ী বলে অনেকের অভিমত।
গত ১০ মার্চ মিডিয়ায় ‘মাগুরার কিছু ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নারী ও শিশু নির্যাতন ও দমন ট্রাইব্যুনালকে এ নির্দেশা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এদিকে এ ঘটনায় ফুঁসছে গোটা দেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে তীব্র প্রতিবাদ। শনিবার মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গঠিত হয় ‘ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ’। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘেœ ঘরে বাইরে দায়িত্ব পালন করবে। এতে যারা তাদের বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন ও সোচ্চার থাকতে হবে। পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ লালন করতে হবে। সচেতন মহলের অভিমত, এবার সময় এসেছে, আমাদের সকলের উচিত এই অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো, আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং একটি নিরাপদ ও সম্মাজনক সমাজ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। গত জুলাই বিপ্লবে দেশের তরুণ সমাজ বিশেষভাবে নারী সমাজ যে যুগান্তকারী সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন, তার সাথে গত কয়েক মাসের ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত বেমানান। এগুলোর বিরুদ্ধে তরুণ তরুণীয়দের বহ্নিশিখার মতো জ¦লে ওঠতে হবে, বিদূরিত করতে হবে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো অন্ধকার দিক। সমাজের সকল স্তর ও পর্যায় থেকে। আমরা এদিকে সকল সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।