আবাসন সুবিধায় পিছিয়ে শাবি, ৬৬.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনাবাসিক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ৩:৩০:১৪ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিষ্ঠার চার দশক হলেও আবাসন সুবিধায় পিছিয়ে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। দেশের সেকেন্ড জেনারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে তলানীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান। প্রতিষ্ঠার চার দশক হতে চললেও এখানে গড়ে উঠেছে মাত্র ৬টি আবাসিক হল। এই হলগুলোতে গড় ৩৩.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পান। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬৬.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনাবাসিক হিসেবে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলের বাইরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের অনেক সময় অতিরিক্ত ভাড়া, যাতায়াতে সময় ও অর্থ ব্যয়, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সমস্যাসহ নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। তাদের নিরাপত্তাহীনতার ইস্যুটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নারী শিক্ষার্থীরা বেশি অনিরাপদ। ফলে ৬৬.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক চাপে পড়তে হচ্ছে, যা সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা যদি অন্তত আবাসিক সুবিধার নিশ্চয়তা না পান, তাহলে তাদের শিক্ষার মান ও মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবাসন সমস্যার সমাধান ছাড়া একটি মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ হ্রাস এবং পড়াশোনায় মনোনিবেশ নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত এই সংকট দূর করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জানা গেছে, দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে সে অনুপাতে বাড়েনি তাদের সুবিধা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন চরম আবাসিক সংকটে। পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা না থাকায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক হলের বাইরে থেকে নিজেদের খরচে পড়াশোনা করছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত ব্যয়ের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে।
তথ্য বলছে, দেশের প্রথম ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৮৬ সালের ২৫ আগস্ট যাত্রা শুরু করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেই হিসেবে ৩৫টি ব্যাচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের ৩টি করে বর্তমানে মোট ৬টি আবাসিক হল রয়েছে। এই হলগুলোতে ৩ হাজারের মতো শিক্ষার্থী থাকছেন। এছাড়া আরও দুইটি আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নতুন দুইটি আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে আরও ২ হাজার শিক্ষার্থী আসান সুবিধা পাবেন। সেই অনুযায়ী তখন গড় আবাসন সুবিধা দাঁড়াবে ৫৫-৬০ শতাংশ। তবুও ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাইরে থাকতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের (প্রকাশ অক্টোবর ২০২৫) তথ্য বলছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পান। সেই হিসেবে ৬৬.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ইউজিসির তথ্য বলছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়তে আসেন। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক পরিবারের সন্তানও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা না থাকায় (আবাসিক হল ও সিট কম) তারা বড় ধরনের ধাক্কা খান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাবিপ্রবির প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম জালালাবাদকে বলেন, আবাসিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য নতুন হল নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন দুটি হল ও ইন্টারন্যাশনাল হল নির্মাণ করা হলে দুই থেকে আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন নতুন অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে। চলমান প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।







