আর্থিক দুর্ভোগ দেখবে কে?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ৮:২১:০৯ অপরাহ্ন
সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে। একদিকে লকডাউন, রুজি রোজগারে ভাটা অপরদিকে চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনে নিয়ে এসেছে অশেষ দুর্ভোগ। এ অবস্থায় অনেকটা দিশেহারা অবস্থা তাদের।
বলাবাহুল্য, করোনা মহামারি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা সমস্যা ও সংকটের জন্ম দিয়েছে। বিশেষভাবে অর্থনৈতিক সংকট জটিল আকার ধারণ করেছে। এ সময় দেশে লাখ লাখ লোক চাকুরী হারিয়েছেন যাদের অনেকেই এখনো বেকার। বন্ধ হয়ে গেছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এখনো লোকসান দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমন বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন করে লক ডাউনের ঘোষণার সীমিত আয়ের মানুষ বিশেষভাবে দিনমজুরদের অত্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘প্যানিক বায়িং’ অর্থাৎ আতংকিত হয়ে ক্রয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ার ফলে বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে অসাধু বিক্রেতারা নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মওকা পেয়েছে। অনেক নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকের মতে, বিদ্যমান স্বাস্থ্যবিধি পালনে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করা হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতো। এ অবস্থায় লকডাউন দেয়া কতোটুকু যৌক্তিক হয়েছে এ নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। পারত পক্ষে কোন দেশই লকডাউন দিতে চায় না, যতক্ষণ না করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এছাড়া পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ লকডাউনের ঘোর বিরোধী। প্রতিবেশী ভারতও সংক্রমণের যথেষ্ট আশংকা সত্ত্বেও লকডাউনের পক্ষপাতী নয়। এর প্রধান কারণ অর্থনীতি, জনদুর্ভোগ। করোনা মহামারির শুরুতে লকডাউনের ফলে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের যে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারা তা আজো কাটিয়ে ওঠতে পারেনি। এ অবস্থায় আরেকটি লকডাউন তাদের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দিতে পারে। তাই অনেকের মতে সংক্রমণ প্রতিরোধে এদেশে লকডাউনের পরিবর্তে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নই সবচেয়ে উপযোগী ও কার্যকর। অনেকের মতে, সরকার ছাত্র আন্দোলন ও বিক্ষোভ প্রতিরোধ ও দমনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। আর এ ধরনের লকডাউন লোকজনকে অবাধ মেলামেশা, জমায়েত, কেনাকাটা ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ তথা ব্যক্তিগত ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কতোটুকু কাজে আসবে, এতেও সন্দেহ রয়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা, রিকশাচালক ও দিনমজুরসহ দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, যাদের প্রতিদিনের আয়ে সংসার চলে, তারা লকডাউনের সময় খাবে কি? কীভাবে চলবে তারা? এসব প্রশ্নও আসছে সামনে। এই লকডাউন দেয়া হয়েছে এমন এক সময়ে যখন চালসহ অধিকাংশ নিত্যপণের দাম অস্বাভাবিক, ঊর্ধ্বমুখী।
এছাড়া ব্যবসায়ীদের ব্যবসার মৌসুমও এটা। অধিকাংশ ব্যবসায়ী গত মৌসুমে অর্থাৎ রমজান ও ঈদের প্রাক্কালে ব্যবসা করতে পারেননি করোনা মহামারির কারণে। এবার যদি তারা লকডাউনের কারণে এবং নানা অজুহাতে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা করতে না পারেন, তবে তাদের অনেককেই পথে বসতে হবে। দোকানপাট ছেড়ে দিতে হবে ভাড়াসহ পরিচালনার ব্যয় সংকুলান করতে না পারার কারণে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো লকডাউন দিলেও দেশের জনগণকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে তাদের চলতে তেমন কোন অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের বিত্তবান ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা পেলেও সাধারণ মানুষ কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এসব থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ট হওয়ায়, প্রণোদনা সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরীসহ বিতরণ তাদের স্বার্থ ও নির্দেশনা অনুযায়ীই পরিচালিত হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কপালে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
আমরা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনসহ যেকোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষপাতী। কারণ জীবন রক্ষা তথা গণস্বাস্থ্যের প্রতি যে কোন হুমকি মোকাবেলা করা আবশ্যক। কিন্তু এ ধরণের পদক্ষেপ হতে হবে সময়োপযোগী ও দুরদর্শিতাভিত্তিক, কোন ধরণের দুর্ভোগ তথা গণদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নয়। আমরা এদিকে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলসহ সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।