গলদ দূর করবে কে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২১, ৭:০৪:২১ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়া প্রকাশিত ও প্রচারিত দুটি আন্তর্জাতিক সংবাদ এদেশের মানুষের দৃষ্টি উন্মীলনকারী হতে পারে। এর একটি হচ্ছে, আর্থিক কেলেংকারীতে জর্জরিত মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে দেউলিয়য়া ঘোষণা করা হচ্ছে। ৪০ কোটি ডলারের বেশী ট্যাক্স দিতে না পারায় ব্যাংক তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। অপর ঘটনাটি হচ্ছে, করোনা ভাইরাস মহামারির বিধিনিষেধ ভঙ্গ করায় নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীকে জরিমানা করেছে দেশটির পুলিশ।
এ ধরণের অপরাধীর বিরুদ্ধে এমন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি বাংলাদেশে অকল্পনীয়। আর এমন পদক্ষেপ অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় হওয়ার বাংলাদেশ উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি সুখশান্তির ক্ষেত্রে অনেক অনেক দূরে রয়েছে। এদেশে সরকার প্রধান দূরে থাক, ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্টজনদের অন্যায় অপকর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষমতা এদেশের কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নেই। আর থাকলেও তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা নেই বললেই চলে। এই বক্তব্যের সপক্ষে হাজারো উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তবে দেখা গেছে, কখনো কখনো এ ধরণের কোন প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজকে আটক করা হলেও দায়মুক্তি দিয়ে কিংবা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে এদেশ এখন দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠেছে। সম্প্রতি সরকারী দলের একজন এমপি ৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ রেখে মারা গেছেন। জনগণের অর্থ কখনো উদ্ধার হবে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। জীবিত অবস্থায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নেয়নি কিংবা নিতে পারেনি। অথচ মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েও দুর্নীতির সাজা থেকে রেহাই পাননি নাজিব রাজাক।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সরকারী তদন্তের পর তিনি অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হন। প্রধানমন্ত্রীর পদ কেড়ে নিয়ে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। আর মালয়েশিয়ার প্রশাসন ও বিচার বিভাগ এটা করেছে এবং করতে পেরেছে বলেই দেশটি আজ এশিয়ার শীর্ষ সমৃদ্ধ দেশ। আর এ ধরণের কিছু করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের দেশ আজ বাগাড়ম্বরপূর্ণ দরিদ্র দেশ। চাকুরীর জন্য লাখ লাখ বাংলাদেশীকে হন্যে হয়ে ছুটতে দেখা যাচ্ছে মালয়েশিয়ার দিকে।
এবার আসা যাক, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীকে জরিমানা করার প্রসঙ্গে আইন ভঙ্গ করে খোদ প্রধানমন্ত্রীও রেহাই পাননি আইনের হাত থেকে। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, এজন প্রথমবার জরিমানা না করে সতর্ক করা যেতো। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ আইনটি করেছেন এবং তা লংঘন করেছেন, তাই দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তারা জরিমানা করেছেন। এটা একটি দেশের সুষ্ঠু আইন, বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রমাণ। কিন্তু এদেশের উচ্চ পর্যায়ে আইন না মানার যে সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে, এর ফলে সেটা জনগণের মাঝে সংক্রমিত হয়েছে। সম্প্রতি করোনার বিধি নিষেধ লংঘন করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছেন।
এছাড়া প্রতিদিন এদেশের লাখ লাখ মানুষ হাঠে-মাঠে-বাজারে বিপনীতে এবং রাস্তাঘাটে করোনা বিধি লংঘন করছেন। এর পেছনে ঊর্ধ্বতন মহলে আইন না মানার সংস্কৃতির কুফল। এদেশে আইন যদি নরওয়ের মতো ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাধর থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করা হতো, তবে বাংলাদেশের জনগণও আইন মানতো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের গোড়ায় গলদ। এ গলদ দূর না করার ক্ষেত্রে উপরের দুটি ঘটনাই শিক্ষনীয় হতে পারে আমাদের জন্য।