হাসপাতাল উধাও প্রসঙ্গে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২১, ৮:৩৯:৩২ অপরাহ্ন
বর্তমান মহামারির সময়ে অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এই খাতে বরাদ্দও এখন বিপুল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ-করোনা মহামারি মোকাবেলায় ব্যয় করা হলেও বাংলাদেশে এই অর্থে হরিলুট লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মহামারিকালীন গত এক বছরে যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে এশিয়ার কোন দেশে তো নয়ই, এমনকি বিশ্বের অন্য কোন দেশে ঘটেছে বলে জানা যায়নি। এ জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে, ২০০০ শয্যার একটি হাসপাতালের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা। গত বছর ১৭ মে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার বেডের একটি মেইকশিফট অর্থাৎ অস্থায়ী করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ এই হসপিটালকে বিশ্বের একটি সেরা এবং সবচেয়ে স্বল্পসময়ে তৈরী মেইকশিফট করোনা হাসপাতাল বলে দাবি করেন।
কিন্তু বর্তমানে এই হাসপাতালের স্থানটি শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। রাতারাতি যেনো ভোজবাজির মতো হাওয়া হয়ে গেছে হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারটি। এই হাসপাতাল তৈরীর পর এটাকে যথাযথভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ না নিয়ে ঢাকার মহাখালি ডিএনসিসি মার্কেটে ১২শ শয্যার আরেকটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরী করা হয়। এতে ব্যয় ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমানে এই হাসপাতালেও কোন রোগী নেই। সর্বত্র ধূলোর আস্তর জমে আছে। অবস্থা যখন এমন তখন জরুরী পরিস্থিতি সামলানোর অজুহাতে এই ভবনেই আরেকটি করোনা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন, এর আগে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত দুটো হাসপাতাল যখন উধাও কিংবা রোগীহীন খালি অবস্থায় পড়ে আছে তখন আরো কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি হাসপাতাল স্থাপনে পেছনের উদ্দেশ্য কী? এটা কি গল্পের শেয়ালের কুমীর ছানা ভক্ষন নিয়ে ছলচাতুরী?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও তাদের স্বাস্থ্য বিভাগ যখন করোনার এই সংকটে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করছে, পরিচয় দিচ্ছে মানবিকতার, তখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অসাধু নেতামন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের মতো চরম অমানবিকতার পরিচয় দিতে দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে আর্তমানবতার সেবার নামে এদেশের আর্তপীড়িত মানুষের জীবনকে অধিকতর বিপন্ন করে তুলতে। দেশে মহামারি এখন নতুন ও মারাত্মক রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ অবস্থায় আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো সতর্ক ও মানবিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।