ধৈর্য্যই হোক অবলম্বন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ৯:৩৬:৪৩ অপরাহ্ন
এবার একটু অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। একদিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি অপরদিকে লকডাউনজনিত পরিস্থিতি। তা সত্ত্বেও এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা অশেষ ধৈর্য্য সহকারে যে সিয়াম পালন করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সিয়ামের শিক্ষাই হচ্ছে সংযম ও ধৈর্য্য ধারণ।
রমজান শুরু হওয়ায় এবং লকডাউনের ফলে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটের নিত্যপণ্যের বাজারও অনেকটা অস্থির। প্যানিক বা ইমার্জেন্সী বায়িং-এর ফলে অনেক নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিছু কিছু পণ্যের মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে এখনো লকডাউন বা জরুরী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু ঐসব দেশের রমজানের শুরুতে এভাবে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কোন নজির নেই। বরং কাতারে ৬৩০টি নিত্যপণ্যের দাম রমজান উপলক্ষে হ্রাস করা হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য মুসলিম দেশেও তা-ই করা হচ্ছে। পাকিস্তানে তো অনেক আগেই ৫টাকা দরে প্রতিকেজি চাল ও ৮ টাকা লিটারে ভোজ্য তেল সরবরাহের কথা ঘোষণা করেছে ইমরান সরকার কিন্তু এক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। বিষয়টি গভীর দুঃখ, বেদনা ও হতাশার।
দেশের কোটি কোটি দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ যখন লকডাউনকালে কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে থাকবে, তখন তাদেরকে অস্বাভাবিক মূল্যে এসব পণ্য ক্রয় করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কীভাবে এগুলো কিনবে? কোথায় পাবে টাকা? সরকার ইতোমধ্যে লকডাউনে কর্মহীন প্রতি পরিবারকে নগদ ৫০০ টাকা প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন। লকডাউন বাড়লে কর্মহীন প্রতিটি পরিবার পাবে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের প্যাকেট। এটা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু গত লকডাউনে গরীবের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও পণ্যসামগ্রী নিয়ে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, এতে এবারও যে হবে না, এর গ্যারান্টি দেবে কে? আর এবারও যদি তা-ই হয়, তবে দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারগুলোকে অতীতের ন্যায় এমনকি তারচেয়েও বেশী অর্থ কষ্টে নিপতিত হতে হবে।
গ্রামাঞ্চলে এখন বোরো ধান তোলার মওসুম চলছে। এই দুর্যোগ মুহূর্তে কৃষকেরা যদি সাচ্ছন্দ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারেন তবে সেটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে বড়ো ভূমিকা রাখবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ফসল তোলা নির্বিঘœ করতে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়া সরকারসহ সকলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ফসল পরিবহন যাতে নির্বিঘœ হয় এবং ফসল কর্তন ও পরিবহনে জড়িত শ্রমিকদের চলাচলে যাতে কোন ব্যাঘাত বা বিঘœ না ঘটে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর। কোন অবস্থাতেই যাতে তারা হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে তাদের।
রমজান মাসে নিত্যপণ্য ও খাবারের দোকান একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকবে। এসব দোকান বা হোটেল রেস্তোরাঁয় বা হোটেল রেস্তোরাঁয় যাতে পঁচাবাসী ও নি¤œমানের পণ্য এবং খাবার বিক্রি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে স্বাস্থ্যকর ও মানসম্পন্ন পণ্য ও খাবার বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষভাবে হোটেল রেস্তোরাঁ ও অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলো পঁচাবাসি, নিম্নমানের কিংবা ভেজাল খাদ্য সামগ্রী বিক্রয় করে রোজাদারদের স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারির আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। আহ্বান জানাচ্ছি ব্যবসায়ীদের প্রতি, তারা যেনো এই পূণ্যের মাসে এবং করোনা মহামারিরর নাজুক মুহূর্তে মানুষের অসহায়কে পুঁজি করে ইহকালের অবৈধ মুনাফা এবং পরকালে দোজখের আগুন খরিদ না করেন। পারলে কিছু কিছু নিত্য পণ্য কম লাভে এই দুর্যোগ মুহূর্তে বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছি তাদের। এতে যেমন আর্তমানবতা উপকৃত হবে, তেমনি দুনিয়া ও আখেরাতে অশেষ কল্যাণ লাভ করবেন তারা।
লকডাউনের সময় প্রকৃত অসুবিধায় থাকা মানুষ, অসুস্থজন এবং জরুরী প্রয়োজনে যাতায়াতে যাতে কেউ বাধার সম্মুখীন না হন বা হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আর সকল স্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান ও অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে লক ডাউনের সকল নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলেন, মেনে চলেন স্বাস্থ্যবিধি। আর এসব যদি আমরা মেনে চলার চেষ্টা করি, তবে পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম পালনসহ আগামী দিনগুলো আমাদের জন্য অনেকখানি সুখকর ও সুন্দর হয়ে ওঠবে।