এ অমানবিকতা রুখতে হবে
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১০:০৫:২৬ অপরাহ্ন
এটা একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয় যে, কোন কিছু গড়া বা তৈরি করা যতোটা কঠিন, সেটা ধ্বংস বা বিনষ্ট করা ততোটা সহজ। আমাদের দেশের কিছু মানুষের মাঝে গড়ার চেয়ে ধ্বংসের নেশা ইদানিং মারাত্মক হয়ে ওঠতে দেখা যাচ্ছে, যা গোটা জাতির জন্য অশনি সংকেত স্বরূপ। গত বুধবার দৈনিক জালালাবাদ-এ ‘বড়লেখায় ধান লুঠে ব্যর্থ হয়ে চারাগাছ কর্তন’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে বড়লেখার খাস জমির পাকা ধান লুটে ব্যর্থ হয়ে দুর্বৃত্তরা কেটে ফেললো নদীর পাড়ে কৃষকের লাগানো শতাধিক গাছের চারা।
একটি জমিতে যখন কেউ কোন ফসল উৎপাদন করে, সেই ফসলের মালিক ঐ ব্যক্তি হলেও তা গোটা দেশ এমনকি মানবজাতির সম্পদ। এটা প্রকারান্তরে গোটা দেশ ও মানবজাতিকে উপকৃত করে। তাই এই সম্পদের মালিকানা নিয়ে যতো বিরোধ বা বিতর্ক থাকুক না কোনো, তা কোনোভাবেই ধ্বংস করা উচিত নয়। হিংসাও বিদ্বেষ থেকে এই সম্পদ নষ্ট বা ধ্বংস করা যেমন বেআইনী, তেমনি অমানবিক। কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চলে প্রতিহিংসাবশতঃ গাছের চারা কর্তন, ক্ষেতের ফসল বিনষ্টকরণ, বিষ ফেলে পুকুরের মাছে মেরে ফেলা এমনকি বিষাক্ত খাবার খাইয়ে হাঁস মুরগী মেরে ফেলার ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এ ধরণের নির্মমতা প্রাকৃতিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে যেমন অগ্রহণযোগ্য তেমনি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় অবশ্যই বর্জনীয়।
এ ধরণের অনৈতিক, অমানবিক ও বেআইনী ঘটনার খবর প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। বিশেষভাবে স্থানীয় পত্র পত্রিকায় এমন নির্মমতার সচিত্র খবর অনেকটা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কথায় বলে, চোর শোনে না ধর্মের বাণী কিংবা হিংসায় উন্মত্ত মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সামান্য বিবেকবুদ্ধি আছে, এমন মানুষ সাধারণতঃ বিষ দিয়ে প্রতিপক্ষের হাঁস মুরগী কিংবা পুকুরের মাছ মেরে ফেলার কথা নয়। কিন্তু প্রায়ই এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। সরাসরি মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিতে ব্যর্থ হয়ে গোপনে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অনেক দুর্বৃত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিশোধের জন্য এমন নিষ্ঠুরপন্থা অবলম্বন করে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিকভাবে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা জরুরী বলে আমরা মনে করি। যে কোনো বিষয়ে বিরোধ থাকতে পারে, তবে সেই বিরোধের জের ধরে কোন প্রাকৃতিক সম্পদ যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে সমাজের গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ত্বরিৎ ও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া এখন জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রায়ই এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। বৃক্ষ বা গাছের চারা কেটে ফেলার ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। অথচ একটি বীজ বা চারা থেকে একটি গাছ বড়ো করতে মানুষের কতোটুকু শ্রম ও সময় ব্যয় করতে হয়, তা ভেবে দেখে না একজন নৃশংস কর্তনকারী। যে গাছের চারা দায়ের একটি কোপে চিরতরে ধ্বংস করে ফেলা যায়, তাকে যতœ আত্তি করে মূল্যবান ও ফলবান মহীরুহে রূপান্তরিত করতে বছরের পর বছর লেগে যায়। তা-ই এ ধরণের অপকর্ম প্রতিরোধে কঠোর আইন ও এর প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমাদের দেশে বিভিন্ন বিক্ষোভ আন্দোলনকালে নির্বিচারে সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ ভাঙচুর ও ধ্বংসের একটি কালচার গড়ে ওঠেছে। এটাও আমাদের জাতীয় ক্ষতি। একটি গাড়ির দাম কয়েক লাখ টাকা হলেও সেটাকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতে এক পয়সার ও কম দামের একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠিই যথেষ্ট। একটি গাড়ির মালিক একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হলেও মূলতঃ এটা দেশের সম্পদ। এটাকে এভাবে ধ্বংস বা পুড়িয়ে ফেলা জাতীয় সম্পদের ক্ষতি বা অপচয়। তাই ক্ষোভ বিক্ষোভ থেকে যানবাহনসহ জাতীয় সম্পদ ধ্বংসের প্রবণতাও দূর করতে হবে সংশ্লিষ্ট সকলের মান-মগজ থেকে। এক্ষেত্রে কোন ধরণের উত্তেজনা সৃষ্টি থেকেও বিরত থাকতে হবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। একটি বিক্ষোভ মিছিল বেরোলে যদি গুলিবর্ষণ করা হয়, তবে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুরের মতো ঘটনা সংঘঠন করতে পারে। তা-ই এক্ষেত্রে ধৈর্য ও দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে হয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে দেশ ও জাতির স্বার্থেই।
আমরা গ্রামাঞ্চলে প্রতিহিংসা ও আক্রোশবশতঃ বৃক্ষকর্তন, হাঁস মুরগী নিধন ও বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ মেরে ফেলার মতো নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার পাশাপাশি সবধরণের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানাচ্ছি। আহবান জানাচ্ছি এ ব্যাপারে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি।