মশক যন্ত্রণা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ১০:০১:৩৫ অপরাহ্ন
সোমবার দৈনিক জালালাবাদে ‘কিউলেক্স’ মশায় রাজত্ব, অতিষ্ঠ নগরবাসী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসীর দুর্ভোগের পাশাপাশি সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের মশক নিধন কর্মসূচী নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে।
শুষ্ক মৌসুম আসার সাথে সাথে এদেশে মশার বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। পরে ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে মশার জ্বালাতন বহুলাংশে হ্রাস পায়। এটা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, শুষ্ক মৌসুমে নগরীর নালা নর্দমায় পানির প্রবাহ না থাকা অর্থাৎ বিভিন্ন স্থানে পানি ও আবর্জনা জমে থাকার ফলে ঐসব স্থান মশার নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এবার নগরীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে নালা নর্দমা পাকাকরণ এবং ছড়া উদ্ধারের কর্মসূচী থেকে আশা করা হয়েছিলো যে, এবার মশার জ্বালাতন কমবে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে নালা নর্দমার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং স্থানে স্থানে পানি জমে থাকায় মশার উপদ্রব আগের মতোই রয়ে গেছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকার কিছু কিছু ওয়ার্ডে নালা নর্দমা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নকরণের কাজ হলেও অনেক ওয়ার্ড বা এলাকায় নালা নর্দমাগুলো এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে এসব স্থান মশক উৎপাদনের কারখানা হয়ে আছে। এছাড়া নগরীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন জলাশয় ও আবর্জনা ফেলার স্থানগুলোও মশার নিরাপদ প্রজনন স্থল। সর্বোপরি মশার ওষুধ ছিটানোর বিষয়টি একটি প্রহসন হয়ে আছে।
কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই এখানে ওখানে কিছু ওষুধ স্প্রে করে দায় কারতে দেখা যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। এটা মশক নির্মূলে কোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে না। অথচ পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ড ওয়ারি মশার ওষুধ স্প্রে করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে এখন মশার যন্ত্রণায় নগরবাসীকে অতিষ্ঠ হতে হতো না।
বলা বাহুল্য, গত ক’দিন ধরে সিলেট নগরীতে মশার জ্বালাতন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী সন্ধ্যার পর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম, ব্যবসাবাণিজ্য ও ইবাদত বন্দেগী করতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে শান্তিতে পড়াশোনা করতে পারছে না। এ অবস্থায় অনেকে বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত ধোঁয়াসৃষ্টিকারী মশার কয়েল ব্যবহার করছেন। এতে স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে স্বাস্থ্যের। বিশেষভাবে যাদের শ্বাসতন্ত্রের অসুখ রয়েছে তাদের অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের জন্য মশার কয়েলের বিষাক্ত ধোঁয়া সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তীতে বসবাসকারী অনেক দরিদ্র পরিবারের মশারি নেই কিংবা মশারি কেনার সামর্থ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে তাদের সারারাত কয়েক জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এতে যেমন অর্থের অপচয় হচ্ছে, তেমনি ক্ষতি হচ্ছে গণস্বাস্থ্যের।
এভাবে মশার কয়েলসহ মশা নিরোধক বিভিন্ন সামগ্রীর উৎপাদক কোম্পানী ও ব্যবসায়ীরা ফুলে ফেঁপে ওঠছে। অপরদিকে করোনাকালীন এই আর্থিক সংকটের সময় সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষ ও দরিদ্র লোকজনকে শুধু মশা তাড়াতে একটি আলাদা বাজেট বা অর্থ রাখতে হচ্ছে। নগরবাসীর কাছে এখন মশার কয়েল, অ্যারোসোল, ব্যাট ইত্যাদি মশা নিরোধক ও মশক মারার যন্ত্র ও সামগ্রী একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। খাদ্য সামগ্রী কেনার পাশাপাশি এসব সামগ্রী কিনতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। এতে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ পরিকল্পিতভাবে নগরীতে মশক নির্মূল কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে নগরবাসী মশার কামড় থেকে যেমন রেহাই পেতেন, তেমনি মশা নিরোধক সামগ্রীর পেছনে অর্থ-ব্যয় থেকেও বাঁচতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ নিয়ে হাজার বার লেখালেখি সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
আপাতঃদৃষ্টিতে এই সমস্যাটি সাধারণ একটি সমস্যা মনে হলেও প্রতি বছর নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দাকে মশার কারণে অশেষ যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কোনভাবেই রেহাই মিলছে না এই দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রনা থেকে। আমরা নগরবাসীর এই কষ্ট ও দুর্ভোগের অবহেলিত দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং তা দূরীকরণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি, সিটি কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে তুচ্ছ বিবেচনা করে ফেলে না রেখে অবিলম্বে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।