করোনাকালীন কিছু পরামর্শ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২১, ৮:২৭:২২ অপরাহ্ন
টিকা সংকটের সুরাহা হতে না হতেই এখন আরেক নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। সেটা হচ্ছে অক্সিজেন সংকট। দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে করোনা পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটেছে। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। কোন ঘোষণা ছাড়াই গত ৪ দিন থেকে ভারত সরকার তরল অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশ ভয়াবহ অক্সিজেন সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সুবিধা না পাওয়ায় অনেক মুমূর্ষু রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
চিকিৎসকদের মতে, বর্তমানে করোনা সংক্রমণ অনেক বেশী বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন স্ট্রেইনগুলো অতিমাত্রায় সংক্রমিত হওয়ায় রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই দেখা দিচ্ছে তীব্র শ্বাস কষ্ট। ফলে অধিকাংশ রোগীকে দিতে হচ্ছে অক্সিজেন।
উপরের বর্ণনা থেকে বুঝা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং অক্সিজেনের সরবরাহ নিয়ে সংশয় থেকে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে টিকা নিয়ে যে সংশয় ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তা খুব শীঘ্রই যে কাটবে, এমনটি বলা মুশকিল। এখন ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’-য়ের মতো দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট। এসব সংকট থেকে যে জিনিসটি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে তা হচ্ছে, এদেশে সরকারী পর্যায়ে পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার মারাত্মক অভাব বিদ্যমান। শুধুমাত্র লকডাউন নিয়ে গত ক’দিন ধরে যা চলছে, এতে এই পরিকল্পনাহীনতা, দূরদর্শিতার অভাব ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টিই প্রকটভাবে ফুটে ওঠেছে। ভারতে হঠাৎ করে করোনা সংকট সৃষ্টি হয়নি।
গত ক’ সপ্তাহ এমনকি ক’মাসে এই সংকট গভীর হয়েছে। এটা থেকে বাংলাদেশ সরকারের আগেভাগেই সতর্ক হওয়ায় উচিত ছিলো। টিকা ও অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে, এটা আগেই আঁচ করা উচিত ছিলো বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো বিশেষভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের। কিন্তু এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতেও তারা চিরাচরিত ঢিলেঢালাভাব ও নির্লিপ্ততা নিয়ে মোকাবেলার পন্থা অবলম্বন করেন। অতিরিক্ত ভারত নির্ভরতার ব্যাপারে অতীত থেকে তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত ছিলো। পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের নির্মম আচরণ থেকে টিকা ও অক্সিজেনের বিষয়ে আগেই আরো সতর্ক ও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তাদের মাঝে এটা লক্ষ্য করা যায়নি। এরপর যখনই বাস্তব সংকট দেখা দিয়েছে, তখন তারা নানা মিষ্টি কথায় আশ্বস্ত করতে শুরু করেছেন, শীঘ্রই লাখ লাখ টিকা আসছে, চীন-রাশিয়ার সাথে চুক্তি হয়েছে ইত্যাদি বলে দুর্ভোগ পীড়িত জনগণকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন নেতানেত্রী ও আমলাদের।
অথচ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের সকল উন্নত দেশতো বটে নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল প্রতিবেশী দেশগুলোকেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে দেখা যাচ্ছে। এর সুফলও তারা ইতোমধ্যে পেয়েছে এবং পাচ্ছে। আমাদের সৌভাগ্য এই যে, করোনাপীড়িত অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো অনেক ভালো। সাম্প্রতিককালে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। তাই একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এখন থেকেই করোনা মোকাবেলায় একটি সুষ্ঠু ও দূরদর্শি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন আবশ্যক বলে আমরা মনে করি। টিকা, অক্সিজেন, লকডাউনসহ প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা দরকার। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। করোনা মহামারির শুরুতে দেশে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি ও উৎপাদন সাময়িক নিষিদ্ধ করণের বিষয়ে কিছু উদ্যোগ নেয়ার প্রচেষ্টা ছিলো। কিন্তু পরে সেটা বাদ দেয়া হয়। অথচ লকডাউন করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা হলেও স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে করোনাকালীন ফুসফুসের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের বিক্রয় ও উৎপাদন বন্ধ করা হয়নি। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য গ্রহণ বন্ধ করলে এদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। এতে মানুষের ইমিউনিটি অর্থাৎ জীবনী শক্তি বাড়বে। তাই লকডাউন করলে সর্বাগ্রে সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের ওপর লকডাউন আরোপ করা উচিত। আমরা বিষয়টি নিয়ে সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা ও এ ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি সরকারের প্রতি।