অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্কতা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০৬:১৮ অপরাহ্ন
এ দেশে শুষ্ক মৌসুমে সাধারণত অগ্নিকা-ের ঘটনা বেশি ঘটে। ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর বাজারে এক মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ২০টি দোকান ভস্মীভূত হয়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। এ ছাড়া এর আগে একই জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে সংঘটিত অপর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি মোবাইল ফোন ও কসমেটিকসের দোকান ভস্মীভূত হয়। ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ ডিসেম্বর। উভয় ঘটনায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
দেখা গেছে, বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে প্রধানত শর্ট সার্কিট থেকে। আর এ ক্ষেত্রে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক পণ্য বিশেষভাবে দায়ী। ফায়ার সার্ভিসের মতে, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের বেশির ভাগ ঘটনা নিম্নমানের বৈদ্যুতিক পণ্যেল দরুন ঘটে। অবশ্য পুরোনো ও জরাজীর্ণ বৈদ্যুতিক লাইনের কারণেও এটা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের জনৈক উধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, আমরা মাঝে মাঝে নিম্নমানের মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি ডিভাইস ব্যবহার করি। এমনকি টেম্পার নষ্ট হয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তার দীঘদিন ব্যবহার করি।
ইতোপূর্বে গৃহিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে সংঘটিত অগ্নিকা-সমূহের মধ্যে ৩৯ শতাংশ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট এবং ১৮ শতাংশ চুলার আগুন থেকে ঘটে। ঐ বছর হতাহতের সংখ্যাও বাড়তে দেখা যায়। ২০১৯ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ১৮৫ জন নিহন হন এবং আহতন হন ৫৮৫ জন। ২০১৮ সালে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১৩০ জন। নিয়মিতভাবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পর্যবেক্ষণ করে পরিবর্তন করা হলে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। তাদের মতে, উন্নত দেশগুলো নিয়মিতভাবে এই কাজ করে। বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
ফায়াস সার্ভিসের মতে, সচেতনতার অভাব ও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি দৈনিক জালালাবাদ এ ‘পানি সংকটে ফায়ার সার্ভিস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে। সিলেট নগরীতে পুকুর ও অন্যান্য জলাশয় ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ায় কমছে অগ্নি নির্বাপনের জন্য পানি সরবরাহের সুবিধা। বড়ে ধরণের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানির জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। দেশের গ্রামাঞ্চলে এ সমস্যা প্রকট না হলেও শহর ও নগরীগুলোতে এই সংকট দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় শহর ও নগরীগুলোতে অগ্নি নির্বাপনের আশায় ফায়ার সার্ভিসের দিকে চেয়ে না থেকে অগ্নিকা- যাতে না হয় সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসারে, জরুরি নির্গমনের পথগুলো এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে সেগুলো কোনভাবেই অবরুদ্ধ না থাকে। ভবনের জরুরি নির্গমনের দরোজাগুলো বিশেষভাবে চিহ্নিত থাকবে এবং সহজে সেখানে যাওয়া যায় এমন সরাসরি রাস্তা থাকবে। জীবন ও সম্পদের স্বার্থেই এটা করতে হবে।
অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য অগ্নিকা-ের ঘটনা ছাড়াও শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে গত দেড় দশকে অগ্নিকা- বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। প্রত্যন্ত এলাকায় সিগারেটের আগুন ও মশার কয়েল থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা বেশি ঘটছে। বস্তীতে আগুন লাগার পেছনে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ছাড়াও জ¦লন্ত মশাল কয়েল বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়া বর্তমান সময়ে রান্নাঘরের গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি গ্যাসের রাইজারে বজ্রপাতের ফলেও অনেক সময় অগ্নিকাণ্ড হচ্ছে।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে অগ্নিকা-ের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালে সারা দেশে ২২ হাজার ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা ২০২০ সালের চেয়ে ১ হাজার ৪৯টি বেশি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৩ হাজার ৩৩০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৮০ জন। অগ্নিদগ্ধ ও আহতের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। দেশে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসাও অপর্যাপ্ত। নিঃসন্দেহে এটা এক ভয়াবহ চিত্র। এ অবস্থায় দেশে অগ্নিকা- প্রতিরোধে সচেতনতা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন অত্যন্ত জরুরি। ফায়ার সার্ভিসকে আরো আধুনিক ও শক্তিশালী করার পাশাপাশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অগ্নি নির্বাপনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রয়োজন অগ্নিকা- প্রতিরোধে সচেতনতা। আমরা এ দিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।