ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কাতারের সাহসী ভূমিকা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫৫:১৭ অপরাহ্ন
কোন মুসলিম দেশে বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান আয়োজনের নজির খুবই কম। এদিক দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট কার্টার বলেছেন, কাতার বিশ্বকাপের মধ্যে দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানলাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের ইভেন্টগুলো ইসলামের বাস্তবতা সম্পর্কে জানার সুবর্ণ সুযোগ তৈরী করেছে এবং পশ্চিমাদের ‘ইসলামোফোবিয়া’ অর্থাৎ ‘অকারণ ইসলাম সংক্রান্ত ভীতি’ সৃষ্টির পেছনে কারা আছে-তা প্রকাশ করেছে। নামাজের সময় হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বকাপের ইভেন্টগুলো স্থগিত রাখা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার এখনো একটি বড়ো সমস্যা। পেশাগত সাংবাদিকতা ও বিভিন্ন ইসলামী সংস্থার সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার মিথ্যা অভিযোগ খন্ডন করা হয়। সাংবাদিক কার্টারের এমন বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তার এ বক্তব্যকে কাতারসহ আরব ও মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে সঠিক চিত্রায়ণ হিসেবে মনে করছেন নেটিজেনরা।
সাংবাদিক কার্টার আরো বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনকে ঘিরে কাতারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। ইসলামোফোবিয়ার পদ্ধতিগত প্রচারণার অংশ হিসেবে তা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
ইউরোপীয় দেশগুলো কাতারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুললেও ইসরাইলী নৃশংসতা নিয়ে তাদের নীরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি পশ্চিমাদের নেতিবাচক প্রচারণা বিশ্বকাপের দর্শকদের মধ্যে বিরক্তিভাব তৈরী করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
লক্ষণীয় যে, বিগত বছরগুলোতে মুসলিম নারীদের হিজাব নিয়ে ইসলাম বিরোধী ও ইসলামোফোবিয়ার কুশিলবরা পাশ্চাত্যের দেশগুলোসহ গোটা বিশ্বে যে বিদ্বেষ ও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে, সেই হিজাবের প্রতিই অমুসলিমরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কাতার বিশ্বকাপে এসে তারা এ বিষয়ে তাদের অনেকে আগ্রহ ও মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন। দোহায় মুসলিম ভলান্টিয়াররা বিদেশী অমুসলিম নারীদের কাছে হিজাবের সৌন্দর্য তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে তা গ্রহণও করেছেন আনন্দিত চিত্তে। এখন অনেক ঘটনার কথা ইতোমধ্যে মিডিয়ায় এসেছে। এ নিয়ে বিদেশী নারীরা বক্তব্যও দিয়েছেন। তাদের হিজাব পরিহিত ছবিও প্রকাশিত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায়।
দেখা যাচ্ছে, ইসলাম ধর্মের নিয়ম ও মূল্যবোধ রক্ষায় শুরু থেকেই বদ্ধপরিকর বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ কাতার। কাতারে বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো পবিত্র কোরআন পাঠ করা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। মার্কিন অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যান ও কাতারি তরুণ গানিম আল মিফতাহের সংলাপের মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় সম্প্রীতির বার্তা।
গত ২০ নভেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ধর্ম প্রচারণা কর্মসূচী শুরুর এক সপ্তাহেরও কম সময়ে কাতারে ৫৫৮ ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ঐদিন ব্যক্তিগত টুইটার একাউন্ট থেকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় কাতারের বিশিষ্ট দাঈ অর্থাৎ ইসলাম প্রচারক ডঃ ফয়সাল হাশেমী একথা জানান। এর ৯ দিন পর ইসলামী দাঈ জাকির নায়েক জানান, কাতারে ৮৮৭ জন অমুসলিম পবিত্র ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আল জাজিরা এ খবর প্রচার করেছে। ইসলাম প্রচারণার অংশ হিসেবে কাতারের রাজধানী দোহার হোটেলগুলোর কক্ষে একটি বিশেষ বারকোডের ব্যবস্থা করেছে কাতার। কেউ ইচ্ছে করলেই বারকোড স্ক্যানের মাধ্যমে বিশ্বের সকল ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, আরব ঐতিহ্য ও ইসলাম প্রচারের অংশ হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে বিভিন্ন বইপত্র। ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইসলাম’ নামে ৬টি ভাষায় একটি ই-বুকও দেয়া হচ্ছে সমর্থকদের। কুরআন ও হাদীসের বাণী সম্বলিত দেয়ালচিত্রও শোভা পাচ্ছে কাতারের পথে পথে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে ইসলামী আদর্শ ও ঐতিহ্য তুলে ধরায় কাতার সরকার বিশেষভাবে দেশটির শাসক বিশ্বের মুসলিমদের দ্বারা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন। আমরা কাতার সরকারের এই সৎ ও সাহসী ভূমিকাকে স্বাগত জানাচ্ছি।