খাবার থেকে হারিয়ে যাবে মাছ মাংস?
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৭:০৪ অপরাহ্ন
সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার দরে ৪ সদস্যের একটি পরিবারে মাছ-মাংস ছাড়াই খাবারের জন্য খরচ হচ্ছে ৯ হাজার ৫৫৭ টাকা। মাছ মাংস ধরলে খাবারের এ খরচ দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা। ৮টি খাত ছাড়া অন্য কোন খাতের কর্মীর এই ব্যয় বহন করার সক্ষমতা নেই। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকারী সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মজুরী পর্যালোচনার সর্বশেষ বছর থেকে মূল বেতনের ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও সকল শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ৪ সদস্যের একটি পরিবারের খাদ্যের এই খরচ বহন করার সক্ষমতা তৈরী হবে না।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি যে অবস্থায় ছিলো সেখান থেকে আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় কারণ হলেও আগে থেকেই মূল্যস্ফীতি বেশী ছিলো। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীন বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বড়ো কারণ। এর ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর চাপ বাড়ছে।
লক্ষণীয় যে, প্রতিবেদনে উল্লেখিত ৮টি খাতের বাইরে দেশে আরো বহু খাত তথা পেশার মানুষ রয়েছেন। তারা যদি সপ্তাহে অন্তত: একদিন মাছ মাংস না খেতে পারে, তবে তাদের সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকা মুশকিল। কারণ খাদ্যে মাছ মাংসের মতো আমিষ জাতীয় খাবার না থাকলে যে কোন মানুষের অপুষ্টি দেখা দিতে পারে। হতে পারে স্বাস্থ্যহানি। আর এটা হলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে। অসুস্থতার কারণে তার উপার্জন ক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে। সর্বোপরি মাছে ভাতে বাঙালি বলে যে প্রবাদটি চালু আছে, তা অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়তে পারে, যা এই জাতিগোষ্ঠীর জীবন যাপন পদ্ধতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। খাদ্যতালিকা থেকে বিদায় নিতে পারে মাছ মাংসের মতো আইটেম।
জনসংখ্যাবহুল বাংলাদেশে অধিকাংশ পরিবারেই সদস্য সংখ্যা তিন বা চারজনের অধিক। আর এসব সদস্য সাধারণতঃ একজন অর্থাৎ গৃহকর্তার আয়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে এসব অধিকাংশ পরিবারের ঐ গৃহকর্তা বা মূল উপার্জনশীল ব্যক্তির আয় ১৫/২০ হাজার টাকার বেশী নয়। তাই মাছ মাংস ছাড়াই খাবারের পেছনে যদি প্রতিটি পরিবারের ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে যায়, তবে ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাস বিল, সন্তানের পড়াশোনার খরচ ও অন্যান্য খরচ তিনি মেটাবেন কীভাবে? এ প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক।
অর্থনীতিবিদরা অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের এতো মূল্যবৃদ্ধিতে বিস্মিত। কিন্তু একথা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, দেশের বাজারে সরকারের তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোন ইতিবাচক প্রভাব নেই। যা আছে নেতিবাচক। অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের যোগসাজশে দেশে সিন্ডিকেট ব্যবসা গড়ে ওঠেছে। এর সাথে যুক্ত ক্ষমতাসীন মহল ও তাদের ঘনিষ্ঠরা। মূলতঃ পণ্যমূল্য তারাই নিয়ন্ত্রণ করেন। জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই কারো। ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত তথা সীমিত আয়ের মানুষের জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠেছে। মানুষের জীবনে যখন অনেক সাধ আহ্লাদ ও অভিলাষ থাকে, তখন শুধু দু’মুঠো অন্ন সংস্থানেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে এদেশের কোটি কোটি মানুষকে। মূল্যস্ফীতির সাথে এভাবে উপার্জনের বৈষম্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে, এদেশের সীমিত আয়ের মানুষের টিকে থাকা মুশকিল হবে, এমন অভিমত সচেতন মহলের। তাই সরকারের অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। যাতে ব্যক্তি ও পরিবারের আয় বাড়ে এবং দ্রব্যমূল্য বিশেষভাবে খাদ্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে থাকে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।