গরীবের আমিষে শকুনের নখর?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০১:৪৮ অপরাহ্ন
এদেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ফার্মের সাদা মুরগী হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু সম্প্রতি এই ব্রয়লার মুরগীর দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকারও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা যায়, দেশের বাজারে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগী। গত ক’দিন ধরে খুচরো বাজারে ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২৫ থেকে ২৩৫ টাকায়। এর আগে এটা এতো বেশী দামে বাজারে কখনো বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পণ্যটি। এছাড়া বেড়েছে সোনালী মুরগীর দামও। বাজারে সোনালী মুরগীর দাম বেড়েছে একমাসের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাজারে দেশী মুরগী বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। ডিমের দামও বেড়েছে। ফার্মের মুরগীর ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। অনেক খামার বন্ধ হওয়ায় বাজারে ডিম ও মুরগীর সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে মুরগীর মাংস ছাড়াও সব ধরনের মাংসের দামই বেড়েছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আর খাসীর মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। অবশ্য রাজধানীর বাইরে কোন কোন শহর ও নগরে গরু ও খাসীর মাংস প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগীর দাম বৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করলেও খুচরো ব্যবসায়ীরা এজন্য খামারীদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। খামারীরা পোল্ট্রি সরবরাহকারী বড় ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মুরগীর খাদ্য, বাচ্চার দাম ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাড়াকে দায়ী করছেন। খামারীরা মনে করেন, কর্পোরেট কোম্পানী মুরগী ও ডিম উৎপাদন বন্ধ করে শুধু সরবরাহ করলে বাজারে ফার্মের ডিম ও মুরগীর দাম কমে আসবে। পাশাপাশি প্রান্তিক খামারীরা ঝুঁকিমুক্তভাবে ব্যবসা করতে পারবেন।
দেখা গেছে, জানুয়ারী মাস জুড়ে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ছিলো ব্রয়লার মুরগীর কেজি। ফেব্রুয়ারী মাসের গত ১৪ দিনে দাম বৃদ্ধি পেয়ে এখন ২৩০/২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ফার্মের লাল ডিমের দাম এক মাসের ব্যবধানে হালিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানুয়ারী মাসে যে বাচ্চার দাম ছিলো ২১ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। অন্যদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ৫০ কেজির এক বস্তা ব্রয়লার মুরগীর খাদ্যের দাম ছিলো ২ হাজার ৮৫০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা বা এলাকাভেদে এর চেয়েও বেশী। দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারী মাসে গ্যাস ও বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হওয়ার পর থেকে দেশের সব খাতেই ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমাফিক অর্থাৎ নিজেদের সিদ্ধান্তে দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। এজন্য সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না। অনেকে আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দায়সারা একটি চিঠি পাঠিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে নিত্যপণ্যের সবগুলোর দাম ৫ থেকে ১০/১৫ ভাগ বেড়েছে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে পণ্যের দাম ১০০ ভাগেরও বেশী বেড়েছে।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষাবিদ হলেও বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান ছিলো তার। বলা যায়, মহাপন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তিনি বলেছেন, মানবদেহে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে হলে অবশ্যই মাংস খেতে হবে। এই চাহিদা শাকসবজী দূরে থাক, মাছ দিয়েও সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ে পুষ্টিবিদদের ধারণাও তা-ই। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মতো বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দেশে সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ব্রয়লার মুরগীই সেরা। কিন্তু বর্তমানে অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো জনপ্রিয় ব্রয়লার মুরগীকে কারসাজির আইটেম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
পোল্ট্রি ফীডের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে তারা ব্রয়লার মুরগীর দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করেছে। দেখা যাচ্ছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ানো হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বিদ্যুৎ গ্যাস কিংবা ডলারের দাম কি দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এই হারে বেড়েছে যে ব্রয়লার মুরগীর দাম প্রতি কেজিতে দ্বিগুণ বাড়াতে হবে, এমন প্রশ্ন যে কারোর মনে জাগতে পারে।
সব কথার শেষ কথা, বাজারের ওপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের তেমন কোন মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ নেই। তা চাল তেলই হোক কিংবা ব্রয়লার মুরগীই হোক। এ অবস্থায় এক চরম বিশৃংখল ও নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে মার্কেটে। আর এ অবস্থার সবচেয়ে বড়ো বলি সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষ। খাদ্যাভাব ও অপুষ্টির শিকার মূলতঃ এরাই, যাদের বাঁচার কোন রাস্তা নেই বর্তমান বৈরী পরিস্থিতিতে।