বিদ্যুৎ সংকট শুধুই বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০১:৪৫ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শংকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সময়মতো ভর্তুকির অর্থ ছাড় না করার পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানী কেনা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় এবার গ্রীষ্মকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পিডিবি থেকে অর্থ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এ অবস্থার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত চার মাসে পিডিবি’র লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে চেয়ে পিডিবি’র পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত বছর জুন থেকে সময়মতো ভর্তুকির অর্থ পায়নি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সময়মতো এই ভর্তুকির অর্থ পাওয়া না গেলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারী-বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাগুলো। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রতিটি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত তরল জ্বালানী মজুদ রাখা প্রয়োজন। সময়মতো আর্থিক সহায়তা না পেলে তা সম্ভব হয় না। ফলে ভর্তুকির অর্থ না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর বেসরকারী খাতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার খাতে আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র, সরকারী বিভিন্ন কোম্পানী এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানী করে বিতরণের পর ভর্তুকি বাবদ ২৫ হাজার ২২১ কোটি টাকা প্রয়োজন। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, কয়লা ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় পিডিবি’র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের জুন থেকে ফার্নেস অয়েলের আমদানি শুল্ক ও কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় শুল্ক বাবদ প্রায় ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৫ মাসেই বিদ্যুতে ভর্তুকির তহবিল তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন এ তহবিলে আছে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। গত বছর নভেম্বর থেকে ভর্তুকির ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে, যা এ খাতে মোট বরাদ্দের ৮৮ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিলো। এ দিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়া হয়। অর্থ বিভাগের জনৈক কর্মকর্তার মতে, বাজেটে বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকি রাখবে কি-না, সে বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভর্তুকি দিতে না চাইলে বিদ্যুতের দাম তৃতীয়বারের মতো বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, পিডিবি থেকে প্রতি মাসে ভর্তুকির দাবি আসে। বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়, তা দিয়ে তাদের চাহিদা মেটে না।
উল্লেখ্য, গত বছর নভেম্বরে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। গত কয়েকদ মাসে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও চলতি অর্থ বছরে সরকারকে ৪০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি ভর্তুকি গুণতে হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
লক্ষণীয় যে, গ্রীষ্ম আসার আগেই ইতোমধ্যে সিলেটসহ দেশব্যাপী বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রায় প্রতিদিন দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্যে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ সংকটের নেপথ্যের কারণগুলো জানতে আগ্রহী নয়, তারা চায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। বিদ্যুতের জন্য বাড়তি মূল্যের চাপও তারা অনেকটাই মেনে নিয়েছেন। অত্যন্ত কষ্ট হলেও বিদ্যুতের বাড়তি মূল্য পরিশোধ করে যাচ্ছেন মুখ বুঁজে। তারা প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গসহ প্রতিবেশী অঞ্চল ও দেশগুলোর বিদ্যুৎ সংকটের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকটের তুলনা করছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোতে তো এতো বিদ্যুৎ সংকট নেই, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নিয়ে হচ্ছেটা কী? তাদের এ প্রশ্নের জবাব শুধুমাত্র সরকারের শীর্ষ মহলই দিতে পারেন। কারণ বিষয়টি তাদের একচেটিয়া দখলে। সাধারণ জনগণ বা অন্য কারোর এতে কথা বলার অধিকার নেই, প্রশ্ন উত্থাপনের অবকাশ নেই। ইনডেমনিটি আইন করে সবার মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এভাবে বিদ্যুৎ নিয়ে যা খুশী করার ক্ষমতা নিরংকুশ করা হয়েছে।
সচেতন মহল মনে করেন, বিদ্যুৎ নিয়ে এ পর্যন্ত এদেশে যতো দুর্নীতি, অনিয়ম এবং আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, অন্য কোন বিষয় নিয়ে তা হয়নি। এসব দুর্নীতি অনিয়ম ও অর্থ পাচার বন্ধ না হলে এদেশে বিদ্যুৎ সংকট দূর হবে না। বিদ্যুৎ সংকটের পেছনে যা সবচেয়ে বেশী দায়ী তা হচ্ছে ডলার সংকট। আর ডলার সংকটের জন্য দায়ী অর্থ অর্থাৎ ডলার পাচার। এটা বন্ধ না হলে কখনো ডলার সংকট দূর হবে না, দূর হবে না বিদ্যুৎ সংকট। তাই সচেতন মহল এদিকে সরকার ও দেশবাসীর দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছেন বার বার।