প্রবাসী ও বিদেশগামীদের অসুবিধা দূর করতে হবে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০২:৩০ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে রেমিট্যান্স অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থ। এই রেমিট্যান্সের ওঠানামার ওপর দেশের অর্থনীতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই রেমিট্যান্সের প্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং ক্রমশ: এটা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই যে করতে হবে সরকারকে, এতে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা সংশয় নেই। জানা গেছে, বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বিদেশগামীরা নানামুখী ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। ঢাকাসহ সারা দেশে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। অনেক গ্রাহকের আবেদনের সময় এক বছর হয়ে গেলেও মুঠোফোনে আসেনি কার্ড তৈরী হওয়ার কোন বার্তা। আবেদনের পর শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের পর ন্যুনতম ২ মাস অপেক্ষা করতে হয় পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার আবেদন দ্রুত আগানোর জন্য অভিযোগ আসে অর্থ লেনদেনের।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ২০ মাসে প্রায় ১৪ লাখের মতো নবায়ন ও নতুন লাইসেন্সের আবেদন জমা পড়ে। তবে আবেদনের অনুযায়ী লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারেনি বিআরটিএ। মূলত: তখনই জট প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আগের আবেদনকৃত লাইসেন্সগুলো ডেলিভারির কাজ সম্পন্ন করতে চাইছেন। এতে যারা নতুন করে আবেদন করেছেন তাদের জন্য লাইসেন্স পেতে দেরী হচ্ছে। পুরোনো লাইসেন্সগুলো দেয়া হয়ে গেলে নতুন করে আবেদনগুলো তারা দ্রুত ডেলিভারি দিতে পারবেন। অবশ্য জরুরী লাইসেন্স কোন প্রক্রিয়ায় দেয়া হবে এবং ফী সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে কতো টাকা নেয়া হবে, তা বিবেচনা করছে বিআরটিএ। তবে যে ৯ হাজার টাকা ফী ধার্য করা হয়েছে, তা ১২ হাজার টাকা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
কথা হচ্ছে, বিদেশগামী বাংলাদেশীদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হয়। অনেক ড্রাইভিংয়ের পেশা বা চাকুরী নিয়েই বিদেশ যান। তাদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বিদেশে কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তাই বিদেশগামী বা বিদেশ গমনেচ্ছুরা যাতে ঝামেলা ও সময়ক্ষেপণ ছাড়াই যথাসম্ভব স্বল্প সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন, সেদিকে নজর দেয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ বিআরটিএ’র গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দেশে লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান জট বা জটিলতা কমানোর পাশাপাশি বিদেশগামীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি দ্রুত ও সহজসাধ্য করার জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
আরেকটি বিষয়, মিডিয়ায় প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে পাসপোর্ট মেশিনের অভাবে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ডলার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কনস্যুলেট অফিস হলেও নেই পাসপোর্ট মুদ্রণের সুবিধা। ফলে ৮টি অঙ্গরাজ্যের পাসপোর্ট নবায়ন করতে যেতে হয় ওয়াশিংটনে। কনস্যুলেটের শতভাগ সুফল পেতে দ্রুত পাসপোর্ট নবায়নের ব্যবস্থা করার দাবি প্রবাসীদের।
প্রবাসীদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আলবামা, টেনেসি, সাউথ ক্যারোলিনা, আরাকানসাস, মিশিসিপি, লুইজিয়ানা-এই ৮টি অঙ্গরাজ্যের জন্য এই কনস্যুলেট অফিস খোলা হলেও নেই পাসপোর্ট অফিস। ফলে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কয়েক লাখ প্রবাসীকে যেতে হয় ওয়াশিংটনে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এখানে শুরু থেকেই একটি পাসপোর্ট মেশিন ব্যবহারের সব প্রস্তুতি আছে। তাছাড়া এ সেবা চালু হলে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার ডলার আয়ের পথ সুগম হবে, যা দেশের রাজস্ব ভান্ডারে যোগ হবে।
বলা বাহুল্য, বর্তমানে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আগে প্রথম স্থানে ছিলো সৌদি আরব। কিন্তু সেই স্থান এখন দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া এখন সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো অনেক বেশী রেমিট্যান্স আসতে পারে। বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং কাজের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে ওঠতে পারে বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট ছাপানোর বিষয়টিকে সহজতর করতে ফ্লোরিডার কনস্যুলেটে অবিলম্বে একটি পাসপোর্ট মেশিন বসানো আবশ্যক। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তথা সরকারের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সর্বোপরি আমরা প্রবাসী আয় এবং প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের প্রবাসী মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহবান জানাচ্ছি। আশা করি সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে।