বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২৩, ৯:২৩:৪৯ অপরাহ্ন
ইদানিং সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু’সপ্তাহে সিলেটে প্রায় অর্ধডজন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের পুলিশ সুপারের কার্যালয় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে । ঐদিন রাত ৮টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থিত এসপি অফিসের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে আগুন লাগে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। এছাড়া গত সোমবার রাত ৮টার দিকে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে অবস্থিত আল হামরা শপিং সেন্টারে আগুন লাগে। রাত সোয়া ৮টার দিকে মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকে আগুনের শিখা বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তৃতীয় তলার একটি দোকানে আগুন লাগে। শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
গত রোববার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ পূর্ব বাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বাজারের ৭টি দোকান পুড়ে যায়। ঐদিন রাত সাড়ে ১১ টার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ধারণা করা হয়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ।
এছাড়া গত কয়েক সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানে একটি ১২ তলা আবাসিক ভবনে আগুন লাগে । এতে ৩ ব্যক্তি নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হন। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে অগ্নিকান্ডটি ঘটে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১ টি দোকান ও ৭টি গুদাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বহুল আলোচিত ইসি ভবনের অগ্নিকান্ডের প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এতে ইলেক্ট্রিক ভোটিং মেশিনের কন্ট্রোল ইউনিট ৫৯ টি ব্যাটারী, ৪৭টি, ব্যালট ৭৮৯ টি, মনিটর ১২৩৩ টি, ক্যাবল ৫৫৯সেট, মনিটরের ব্যাটারী ৬৪ টি, ল্যাপটপ ১ টি ও বার কোড স্ক্যানার ২ টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে প্রকাশ, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২ হাজার আগুন লাগার ঘটনায় ফোন আসে। শুধু ঢাকাতেই প্রতি বছর গড়ে ১৮০ জনের মৃত্যু ঘটে অগ্নিকান্ডের ফলে। আর এসব অগ্নিকান্ডের প্রায় ৪০ শতাংশই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে ঘটে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২০৬৩২ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে ঘটে ২১৬০১টি। ২০২১ সালে | বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে ৩৭ শতাংশ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয় । বলা বাহুল্য, শর্ট সার্কিটের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহ হয়। এর ফলে উত্তাপ ও বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ বা ফুলকি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। নিরাপত্তা ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি না থাকলে ওই সার্কিট বা বর্তনীতে অধিক উত্তাপের ফলে আগুন ধরে যেতে পারে, যা ঘরবাড়ি বা কলকারখানায় ছড়িয়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। লক্ষণীয় যে, বাসাবাড়ি, দোকানপাট বা অন্যান্য ভবনে সাধারণতঃ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ তারের ক্ষতি ইত্যাদি কারণে শর্ট সার্কিট হয়ে থাকে। আর শর্ট সার্কিট থেকে ঘটে অগ্নিকান্ড। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট নিয়ন্ত্রণে রাখতে উন্নতমানের ক্যাবল বা বৈদ্যুতিক তার, ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, রুটিনমাফিক চেকিং, ওয়্যারিং লকশিট তৈরী, রুমের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড প্রসঙ্গে বলা যায়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি তৈরী করতে হবে। অর্থাৎ বাড়ির দেয়ালের ভেতরে বা বাইরে দিয়ে যে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হবে তা হতে হবে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী। এছাড়া বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই নিয়মিত রুটিন মাফিক চেকআপ করতে হবে। ৬ মাস পর পর তা করতে হবে। ক্যাবল বা রুমের তাপমাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তবে এ বিষয়ে অবশ্যই নজরদারি বাড়াতে হবে। বর্তমান সময়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম ও বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে। সরকারের পক্ষ থেকে | বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ কলকারখানা ইত্যাদিতে বৈদ্যুতিক লাইন পরীক্ষার নিয়ম চালু করা জরুরী। বিভিন্ন উন্নত দেশে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। একই সাথে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে এ বিষয়ে। আশা করি সংশ্লিষ্ট সবাই এদিকে দৃষ্টি ও মনোযোগ দেবেন ।