পাহাড় কর্তনে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মার্চ ২০২৩, ১২:৩০:১৮ অপরাহ্ন
‘মানুষ নিজের তৈরী আইন লংঘন করতে পারে কিন্তু প্রাকৃতিক আইন লংঘন করতে পারে না’-এটি একটি প্রাচীন মতবাদ। প্রবাদটিতে যে সত্য ফুটে উঠেছে সেটা হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম বিশেষভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয় এমন কিছু করা মানুষের উচিত নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এদেশের একশ্রেণীর মানুষ এই আপ্তবাক্য ভুলে প্রাকৃতিক নিয়ম বিরোধী এমন কিছু কর্মকান্ডে লিপ্ত, যা এদেশ এমনকি গোটা বিশ্বের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৃষ্টি করেছে ভূমিকম্পের ঝুঁকি।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত ৩০ বছরে সিলেট জেলার অনেক উপজেলায় শতাধিক পাহাড় টিলা ধ্বংস করা হয়েছে।
ভূমিখেকোরা পাহাড় টিলা কাটার ব্যাপারে বিদ্যমান সরকারী বিধি নিষেধ ও আইনের প্রতি কোনরূপ তোয়াক্কা না করেই নির্বিচারে পাহাড় টিলা কেটে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নাকের ডগায় এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, এমন অভিযোগ সচেতন মহলের।
সংবাদে প্রকাশ, ফেঞ্চুগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নের ৩টি পাহাড় টিলা ঘেরা আর ২ টি হাওর বেষ্টিত। পাহাড় টিলা ঘেরা ফেঞ্চুগঞ্জ, মাইজগাঁও, ঘিলাছড়া ইউনিয়নের টিলাগুলোতে গাছপালার পাশাপাশি ছিলো বন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরণ। কিন্তু গত ২৫-৩০ বছরে আশংকাজনক হারে পাহাড় টিলা কাটার ফলে জীব বৈচিত্র্য এখন বিলুপ্ত প্রায়। সম্প্রতি হবিগঞ্জে টিলা কর্তনকালে দু’ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই জেলায় ঘটছে বেআইনি টিলা কাটার ঘটনা।
ইতোপূর্বে পত্রিকায় প্রকাশিত অপর এক সংবাদে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূমি বেদখল হওয়ায় এখন ধ্বংসের মুখে বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। নিঃসন্দেহে এটাও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর আরেকটি মারাত্মক আঘাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরণের দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। উপরের দু’টি ঘটনাই প্রাকৃতিক আইন বা নিয়ম বিরোধী। এভাবে প্রাকৃতিক আইন লংঘনের ঘটনা যদি ঘটতে থাকে তবে সর্বপ্রথম সংশ্লিষ্ট বা সংলগ্ন এলাকার জনগণকে এর খেসারত দিতে হবে।
এক সময় এর প্রভাব পড়বে গোটা দেশ এমনকি বিশ্বের উপর। ইদানিং পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে লেখালেখি ও আলোচনা হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। রয়েছে পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত আইন কানুন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এসব আইন কানুন মানা হচ্ছে না। পরিবেশ বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে অবৈধভাবে পাহাড় টিলা কর্তন এবং বনভূমি দখল ও উজাড়করণের সাথে জড়িত থাকতে দেখা যাচ্ছে।
তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে এ ধরণের বেআইনী ও ক্ষতিকর কর্মকান্ড প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর পদক্ষেপ ও উদ্যোগ কামনা করি।