দ্রুত বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগী
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ৩:৩০:০৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: দেশে আশঙ্কাজনক হারে দ্রুত বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) ২০২১ সালের তথ্যানুসারে, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে ১ কোটি ৩১ লাখ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সারা দেশে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ১০৯টি শাখায় নিবন্ধিত ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ।
এদিকে, নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্তের হারও শঙ্কার। দেশের ২৭ শতাংশের বেশি নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ১৯ শতাংশের বেশি নারী অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বাকি ৮ শতাংশ নারীর গর্ভধারণের আগেই ডায়াবেটিস থাকে। তবে উপসর্গ না থাকায় তাঁরা তা জানতে পারেন না। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। ‘ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস’ সাময়িকীতে ‘স্ক্রিনিং ফর জেসটেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস অ্যান্ড ইটস প্রিভিলেন্স ইন বাংলাদেশ: আ নেশনওয়াইড সার্ভে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, খুলনার নারীদের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি; এ হার ৩৯ শতাংশ। আর সিলেটে এ হার ২৯ শতাংশ।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার কোথায় কেমন :
গবেষণায় উঠে এসেছে, খুলনার পরের অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ, সেখানে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩৩ শতাংশের বেশি। এছাড়া রাজশাহীতে প্রায় ৩১ শতাংশ, সিলেটে প্রায় ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশের বেশি, বরিশালে প্রায় ২৫ শতাংশ, রংপুরে প্রায় ২৪ শতাংশ এবং রংপুরের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে ঢাকায় সবচেয়ে কমসংখ্যক নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি ছিল, অর্থাৎ গ্লুকোজ চ্যালেঞ্জ টেস্ট বা জিসিটি পজিটিভ (রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ দশমিক ৮ মিলিমোলের বেশি) পাওয়া গেছে খুলনায় প্রায় ৬১ শতাংশ, ময়মনসিংহে প্রায় ৫৪ শতাংশ, সিলেটে ৪৮ শতাংশের বেশি, রাজশাহীতে প্রায় ৪৭ শতাংশ, ঢাকায় ৪৪ শতাংশ, বরিশালে প্রায় ৪৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে প্রায় ৪১ শতাংশ ও রংপুরে প্রায় ৪০ শতাংশ।
সচেতনতায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হয় :
বারডেম একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠানও নতুন প্রকাশিত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে গর্ভের সন্তানেরও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, পরিমিত খাবার খেতে হবে, শরীরচর্চা করতে হবে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখতে নতুন দম্পতিদের মধ্যে নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান জানান, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা নামের একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। এটি যৌথভাবে পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে কাবিনামায় ‘সুস্থ মা, সুস্থ শিশু/সমৃদ্ধ দেশ/সকল গর্ভধারণ হোক পরিকল্পিত’ স্লোগান যুক্ত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে।