হিলারীর নিষ্ঠুর মন্তব্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০২৪, ১২:৩০:০০ অপরাহ্ন
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিলারী ক্লিনটন দেশটিতে চলমান ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র আন্দোলনের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। তারা কেউই মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। তার এই বক্তব্য সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তরুণ শিক্ষার্থীরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ তার এমন হৃদয়হীন বক্তব্যে।
বিষয়টিকে একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়। ধরা যাক, কিছু শক্তিশালী সশস্ত্র লোক একজন নিরস্ত্র লোককে রাস্তায় ফেলে বেদম প্রহার করছে। প্রহারের ফলে ওই লোকটি প্রায় মৃত্যু পথযাত্রী। এ অবস্থায় আশপাশের মানুষ কি অনুসন্ধানে নেমে পড়বে কী কারণে লোকগুলো এমন নিষ্ঠুরভাবে ওই অসহায় লোকটিকে মারধর করছে না-কি প্রথমে লোকটিকে হামলাকারী নিষ্ঠুর লোকগুলোর হাত থেকে রক্ষা করবে? আশপাশের সচেতন ও বিবেকবান মানুষেরা মারধরের পেছনে অতীতের যৌক্তিক কারণ খুঁজতে গিয়ে আহত লোকটিকে মরতে দেবে না-কি তাকে আগে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাবে? এগুলোর সহজ জবাব হচ্ছে, সর্বাগ্রে নিজের হাতে আইন তুলে নেয়া ওই হামলাকারীদের অন্যায় আচরণ তথা মারধর থেকে ভিকটিম লোকটিকে রক্ষা করতে হবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন উপরোক্ত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তার দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা নিজের ক্লিন ইমেজকেই শুধু কলুষিত করেননি বরং একজন নিষ্ঠুর চরিত্রের নারী হিসেবে নিজের পরিচয় ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি গাজায় ইসরাইলী বর্বরতা, নৃশংসতা ও গণহত্যার সমালোচনা না করে এমন নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা বন্ধের দাবিতে সোচ্চার সচেতন ও বিবেকবান শিক্ষার্থীদের অজ্ঞ বলে কটাক্ষ ও সমালোচনা করেছেন। ইসরাইলী নৃশংসতায় ২৫ হাজার নারী ও শিশু নিহত হলেও একজন মা ও নারী হিসেবে এ ধরনের নিষ্ঠুরতার সমালোচনা না করে তিনি এর প্রতিবাদকারীদের উল্টো দোষারোপ করছেন।
বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বে মানবাধিকারের ধব্জাধারী একটি দেশের জন্য অত্যন্ত বেমানান ও বেদনাদায়ক। হিলারী ক্লিনটন সমর্থিত বর্তমান জো বাইডেনের সরকার শুধু মৌখিক সমর্থন দিয়েই যে ইসরাইলকে সমর্থন করছে এমন নয়, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে ইসরাইলী গণহত্যা ও হত্যাযজ্ঞে। এতে গোটা বিশ্বের সকল বিবেকবান সরকার ও জনগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। দিন দিন সমর্থন বাড়ছে ফিলিস্তিন, বিশেষভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংগঠন হামাসের প্রতি। ঘৃণা ও ক্ষোভ বাড়ছে ইসরাইলের প্রতি। একটার পর একটা দেশ স্বীকৃতি দিচ্ছে ফিলিস্তিনকে আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইহুদীদের লজ্জায় মুখ লুকিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এসব দেখে শুনেও হিলারী ক্লিনটনের মতো সচেতন মহিলা যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে কটাক্ষ করেন, তখন প্রকৃত জ্ঞানবুদ্ধি ও সচেতনতাকেই লজ্জায় মুখ লুকাতে হয়। বলা যায়, হিলারী ক্লিনটনের নিকট থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কোন দেশের সচেতন ও বিবেকবান মানুষই এমনটি প্রত্যাশা করে না।