রাজধানীতে আগুনের ভয়াবহতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:৩৬ অপরাহ্ন
রাজধানী ঢাকা যেনো আগুনের নগরী হয়ে ওঠেছে এখন। প্রায়ই সংঘটিত হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের দগদগে স্মৃতি মুছতে না মুছতেই আগুনে পুড়েছে নিউ সুপার মার্কেট। এতে মূল মার্কেটের কয়েকশ’ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর আগে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে শত শত দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ঈদের প্রাক্কালে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের শত শত কোটি টাকার কাপড় পুড়ে ছাই হয়েছে। এতে পথে বসেছেন অসংখ্য ব্যবসায়ী। আর ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত অন্যান্য ব্যবসায়ী ও লোকজন আর্থিক দিক দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি এই অগ্নিকাণ্ডের অনেকটা প্রভাব পড়েছে ঈদ মার্কেটে। অনেকের মতে, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের জেরে বাজারে কাপড়চোপড়ের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া কিছু দিন আগেও গুলিস্তান, ওয়ারি ও মহাখালীতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায়ই জানমালের ক্ষতি হয়েছে। নিঃস্ব হয়েছেন মানুষ।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গোদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন নারী ও শিশুসহ ১২৪ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শুধু রাজধানীতেই ২ হাজার ৮৮টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্বে অগ্নি দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকাকে।
এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে অনেকে অনেক কারণের কথা বলছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অভিযোগ ওঠলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডের জন্য দায়ী করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটসহ অন্যান্য ত্রুটি বিচ্যুতি ও অসতর্কতাকে। এছাড়া অগ্নি নির্বাপনে প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম ও দক্ষ লোকবলের অভাবকেও অনেকে দায়ী করছেন। রাজধানী ঢাকার দোকানপাট বাড়িঘর ও স্থাপনার সংখ্যার তুলনায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিতান্তই অপ্রতুল। গুলিস্তান ও বঙ্গবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তাদের এই অপ্রতুলতা ও দুর্বলতা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। ঢাকায় কোন ওয়াটার হাইড্রেন্ট না থাকায় বড়ো সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
তাদের মতে, একটি পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য ওয়াটার হাইড্রেন্ট থাকা অত্যন্ত জরুরি। অগ্নি নির্বাপনের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ঢাকা নগরীতে মিল ফ্যাক্টরী ছাড়া কোথাও ওয়াটার হাইড্রেন্ট নেই বলা যায়। পানি সরবরাহ না থাকলে ফায়ার সার্ভিস অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াটার হাইড্রেন্টে সবসময় প্রেশারে পানি ভরা থাকে। হাইড্রেন্ট খুললেই পানি পাওয়া যায়। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন স্থানে এই ওয়াটার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়। যখন কোথাও আগুন লাগে, তখন পানির ঘাটতি মেটানোর জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টের সঙ্গে হোস বা পাইপ লাগিয়ে পানির অভাব দূর করা যায় এবং আগুন নেভানো যায়।
যা-ই হোক, ঢাকায় কোনো এতো ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা এবং এর কারণ নির্ণয় করে অবিলম্বে তা দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আগুন একটি ভয়াবহ জিনিস, এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পালে বা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে যে কী ভয়ানক ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে তা সকলেরই জানা। হলিউডের কয়েক যুগ আগে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্যা ইনফার্নো’তে দেখানো হয়েছে, সামান্য অবহেলায় বা তুচ্ছ ঘটনা থেকে একটি শহর কিভাবে জ¦লে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ঢাকার এসব অগ্নিকান্ডের পেছনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আছে কি-না, তাও অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। বর্তমান অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের ঢেলে সাজানো এবং আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন ও ত্যন্ত জরুরি। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি