ব্যর্থতার লোডশেডিং
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:১২ অপরাহ্ন
একেতো প্রচন্ড গরম তার উপর বৈদ্যুতিক লোডশেডিং জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বিপর্যস্ত করার উপক্রম বা বিপর্যস্ত করতে যাচ্ছে বললে ভুল বলা হবে। কারণ যা-ই হোক ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং একটি দেশ বা ভূখন্ডের প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রা ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য কতোটা মারাত্মক ক্ষতিকর, বর্তমান সময়ে এটা কারোরই না বুঝার কথা নয়। মাত্র কিছুদিন আগে বুক চিতিয়ে বলা হলো দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদিত হয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর দু’তিনদিন যেতে না যেতেই বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আর এই বিপত্তির ক্ষেত্রে নগরীসহ সিলেট অঞ্চল তো ‘যতো দোষ, নন্দ ঘোষ’ হয়েই আছে। সব পাপের ফল সিলেটকেই বেশী ভোগাবে, এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতেও দেখা গেছে, চাহিদার চেয়েও অনেক কম বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে সিলেটকে। এমনকি এই এলাকার এমপি মন্ত্রী মিনিস্টারদের দোহাইও কোন কাজে আসছে না। বিদ্যুতের আনুপাতিক ন্যায্য হিস্যা দেয়া হচ্ছে না সিলেটবাসীকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। অনেক সময় সিলেটে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তাও পায় না সিলেট। এখানে লোডশেডিং করে, জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয় সেই বিদ্যুৎ। মিডিয়ায় গত রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে গরমের তীব্রতার কারণে সিলেটের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না বিদ্যুৎ বরাদ্দ। ফলে লোডশেডিং দিয়েই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। গত শনিবার সন্ধ্যার পর সিলেট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ৬৩০ মেগাওয়াট সেখানে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। আবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ মিলেছে চাহিদার অর্ধেক। ফলে নগরীতে দিনের বেলায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। শহরের বাইরে গ্রাম এলাকায় আরো বেশী লোডশেডিং করা হচ্ছে।
বর্তমানে বিদ্যুৎ নির্ভরতার যুগে দৈনিক ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং কোন সভ্য দেশে কি কল্পনা করা যায়? যুদ্ধকালীন বা জরুরী পরিস্থিতিতে তা হলেও মেনে নেয়া যায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বর্তমানে ইউক্রেইনে যুদ্ধ চলছে। রুশ হামলায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তা সত্বেও ইউক্রেইনে বিদ্যুতের কোন সংকট নেই। বরং দেশের চাহিদা মিটিয়ে গোটা ইউরোপে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন এমন কী বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটলো যে দৈনিক ৬/৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হবে জনগণকে? এই প্রশ্নের জবাব দেবে কে?
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সিলেট বিভাগীয় অফিস ও বিউবো বিতরণ বিভাগ জানায়, গত ২ দিন থেকে জাতীয়ভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে। অপরদিকে হঠাৎ করে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে। এখন দিনের বেলায় নগরীতে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এর মধ্যে কোন কোন এলাকায় ইফতারের সময়ও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই। বরাদ্দ অনুযায়ী আমাদেরকে বিদ্যুৎ বন্টন করতে হয়।
দেশে বিদ্যুতের দুরবস্থারচ নেপথ্য কারণ নিয়ে এ পর্যন্ত বহু লেখালেখি হয়েছে। এখানে তার পুনরাবৃত্তি না করে শুধু এটুকু বলা যায়, ঈদের প্রাক্কালে সাধারণত: নানা ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে ওঠে। অনেক ব্যবসায়ী অপেক্ষায় থাকেন এ সময়ে ভালো ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য। অনেকে বছরের অন্যান্য সময়ের ব্যবসায়ের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন এক সময়ে। তাই তাদের এই প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশা যাতে অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের মধ্যে পড়ে ভেস্তে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখার দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা উর্ধ্বতন মহলের। এমনিতে মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের এই ক্ষয়ক্ষতি যাতে আরো না বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট দূর করতে সর্বাত্মক চেষ্টার প্রয়োজন এখনই। আর এটা করতে ব্যর্থতা গোটা দেশ ও জাতিকে ডুবিয়ে দিতে পারে ব্যর্থতার গভীর অন্ধকারে।