ঈদ এসেছে, ঈদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩০:৫৩ অপরাহ্ন
দীর্ঘ মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর এখন দ্বারপ্রান্তে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষ শনিবার উদযাপিত হতে পারে ঈদ। এবার এমন এক সময় দেশব্যাপী ঈদ উৎসব উদযাপিত হতে যাচ্ছে, যখন দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নানা কারণে বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ জীবনযাত্রায় অস্থিরতা-অশান্তি, অন্যদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট নানা অনভিপ্রেত ঘটনা জাতীয় জীবনে কালো ছায়া ফেলছে। কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় দেশজুড়ে বেশ আতংক সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড হাজার হাজার মানুষের ঈদের আনন্দ ফিকে করে দিয়েছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন মার্কেটসহ জনজীবনে। সিলেটেও এই আতংকের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রমজান ও ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম এখন উর্ধমুখী। হঠাৎ বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। প্রচ- গরমে সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ যখন হাঁস ফাঁস করছেন, তখন হঠাৎ করে নামা শিলাবৃষ্টিতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ফসলহানির শংকা দেখা দিয়েছে। এর সাথে ঢলের আশংকাও বেড়েছে। মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পুরোনো বিপদ এবারও ভাবিয়ে তুলেছে কৃষকদের। স্বপ্নের সোনার ফসল গোলায় তুলতে নড়ে চড়ে বসলেও পেয়ে বসেছে অস্বস্তি। কারণ বড় সংখ্যক জমির ধান এখনো কাটা বাকী। আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে টানা ১০ দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে হাওরাঞ্চলে ঢলের শংকা রয়েছে। যা-ই হোক এ ধরনের শংকা সত্বেও চেষ্টা চলছে হাওরের ধান ঘরে তোলার। সুনামগঞ্জের হাওরে গত বুধবার উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটা শুরু হয়। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
পবিত্র ঈদে বিদেশ থেকে বিপুল রেমিট্যান্স এসেছে। তাই আশা করা যায়, দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনযাত্রায়। তবে দেশব্যাপী বৈদ্যুতিক লোডশেডিং এই আনন্দ উৎসবের মাঝে ‘মাংসের মাঝে হাড্ডি’র মতো বিপত্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। এই বিপত্তি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ব্যবসা বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন আটকানো যাবে না। বিশেষভাবে সিলেট অঞ্চলে যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে, তা এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিতে পারে। তাই এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দিতে হবে। অন্তত: সিলেটের জনগণ যাতে এ অঞ্চলে উৎপাদিত বিদ্যুতের ন্যায্য হিস্যাটুকু পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর সাম্য ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার বার্তা নিয়ে হাজির হয় প্রতি বছর। এক মাসের কঠোর সিয়াম সাধনা মুসলিমদের জীবনে আনে পরিপূর্ণতার ছোঁয়া, খোদাভীরুতা তথা মুত্তাকি হওয়ার অনুপ্রেরণা। ঈদে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে আনন্দ উৎসবে শরিক হবেন, এটাই কাম্য। আনন্দ ভাগাভাগির মধ্যে দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর হয়ে ওঠুক মহিমান্বিত ও সার্বজনীন, এই প্রার্থনা আমাদের।