হিটকে বিট করতে হলে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৩, ১২:৩০:০৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘তাপ কমায় বৃক্ষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকৃতি আমাদেরকে স্থান দিয়েছিলো অথচ আমরা অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, অকারণে বৃক্ষ নিধনসহ নিজেদের বিলাসিতা ও সাম্রাজ্য বিস্তারে প্রকৃতিকে শেষ করে দিচ্ছি। বর্তমানে তীব্র গরমে আমরা অস্থির হয়ে পড়ছি, আর এ তাপমাত্রার বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ও দিন দিন বাড়ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রকৃতির এ আচরণ এবং বিভিন্ন দেশে মরুকরণ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে গাছের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী। গাছ পরিবেশের অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশকে নির্মল রাখে এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণী জগতকে অক্সিজেন উপহার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই গাছের উপকার অশেষ।
অপরদিকে আমরা গাছ কেটে নিজেদের পৃথিবীটাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি, আর সেই কারণেই পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি নিজেরাই সৃষ্টি করছি, যার ফলাফল ভোগ করবে ভবিষ্যত প্রজন্ম।
বলা বাহুল্য, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে গত ক’বছর ধরে। এর প্রভাবে নানামুখী সমস্যা ও সংকট তৈরীর আশংকা দেখা দিয়েছে। অত্যধিক তাপমাত্রায় জনজীবনে দুর্ভোগ ও কষ্ট বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাপদাহের কারণে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী নানা রোগ ব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে শস্য ও ফলমূল উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এবার তীব্র গরমে দেশের অনেক স্থানের ধানে চিটা হতে দেখা গেছে। গরমের তীব্রতায় এই আমের মৌসুমে কাঁচা আমের বোটা শুকিয়ে আম ঝরে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর নানা অসুখ বিসুখ বৃদ্ধি পেয়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়া প্রধান খাদ্যশস্য ধানের উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে।
দেখা গেছে, গত মাসের ১৬ তারিখে রাজধানী ঢাকায় গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে রেকর্ড করা হয় সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখন থেকে সারা দেশে তাপদাহ চলছে। মাঝে মাঝে ঝড় বৃষ্টি হলেও এবং তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও এখনো তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, আগামী মাস বা বছরগুলোতে তাপমাত্রা যে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, এমন আলামত দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে যে চরম তাপমাত্রা চলছে তা সবার জন্যই বেশ উদ্বেগজনক। কারণ তাপের তীব্রতা এতো বেশী যে তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে, বাংলাদেশে যে কোন হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ সাধারণত: ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৭ দিন স্থায়ী হয়। এবার ১৪ পর্যন্ত চলতে দেখা গেছে। এমনকি গরমে রেললাইন পর্যন্ত বেঁকে গেছে ক’দিন আগে।
যা-ই হোক, বাংলাদেশে তাপদাহ হ্রাসে সবচেয়ে বেশী যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বৃক্ষ। পারতপক্ষে গাছ না কাটা এবং শহরাঞ্চলে আরো বৃক্ষরোপনের কোন বিকল্প নেই অত্যধিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে। অনেকে প্রতিটি বাড়ির ছাদে রুফ গার্ডেনিং অর্থাৎ ছাদ বাগান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। ভবনের ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, ওষধি গাছ লাগালে ও সবজির বাগান করলে একদিকে খাদ্যের চাহিদা যেমন মিটবে তেমনি প্রচন্ড গরম থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে। নগরীতে ফ্লাইওভার ও সড়কে নানা স্থাপনার নীচে ও ওপরে বিভিন্ন প্রজাযিতর গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করা যায়। চীনসহ অনেক দেশে এমনটি করা হয়েছে। এতে সড়কগুলো দেখতে অনেক সুন্দরও হয়, তাপমাত্রাও কমাতে সহায়তা করে।
গত ক’বছরে ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন নগর ও শহরে রাস্তা নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করতে গিয়ে বহু পুরোনো ও নতুন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে এসব নগর ও শহরের তাপমাত্রা বেড়েছে। রাস্তাঘাট নির্মাণ, সম্প্রসারণ এবং বিভিন্ন স্থাপনা তৈরীর ক্ষেত্রে যথাসম্ভব গাছপালা না কেটে সেগুলো করার পরামর্শ পরিবেশবিদদের। নগরীর তাপমাত্রা কমাতে সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ বছরের বর্ষায় ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য কর্পোরেশন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি করেছে। আমরা শুধু ঢাকা নয় সিলেটসহ সকল নগরীতে এমন উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। কারণ ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে এর কোন বিকল্প নেই।