বৈরী আবহাওয়ার কবলে মৎস্য
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২৩, ১২:৩৫:২৫ অপরাহ্ন
গতকাল ইংরেজী অনলাইন পত্রিকা ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ তাপমাত্রা ও খরার কারণে বাংলাদেশের হ্যাচারিসমূহে মৎস্য উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। ফলে বাংলাদেশের আমিষের অন্যতম প্রধান এই উৎস সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে সহ¯্রাধিক মাছের হ্যাচারী রয়েছে। এর শ’খানেক সরকারী। চলতি বছর উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত স্বল্পতার কারণে মাছের ডিম ও পোনা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পুকুর ও নদী নালাগুলোতে পানি স্বল্পতার কারণেও মাছের ডিম ও পোনা উৎপাদন কমে যেতে পারে।
মৎস্য বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে, মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়টুকু হচ্ছে মাছের ডিম ও পোনা উৎপাদনের পীক সিজন বা ভর মৌসুম। কিন্তু গত ২ মাস ধরে (মার্চ-এপ্রিল) দেশব্যাপী প্রবহমান তীব্র তাপদাহ হ্যাচারী ও প্রাকৃতিক উৎসসমূহে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাপমাত্রা যদি ৪০% সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পায় তবে ৮০ শতাংশ মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যশোরের একটি বিখ্যাত কৃত্রিম মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রে বার্ষিক ১ লাখ ২০ হাজার কেজি বিভিন্ন জাতের মাছের ডিম ও পোনা উৎপাদিত হয়। কিন্তু চলতি বছর এটা ১ লাখ কেজিতে নেমে এসেছে। একই জেলার চাঁচড়া মৎস্য খামার গ্রামের ৩৪ টি ফিশারী অর্থাৎ মৎস্য খামারের মধ্যে মাত্র ২৫টিতে মৎস্য চাষ হচ্ছে চলতি বছর। অবশিষ্ট খামারগুলোতে উৎপাদন বন্ধ ছিলো। গত ২ মাস এখন সীমিত পর্যায়ে আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে।
মৎস্য খামারের মালিকদের অভিযোগ, শ্রমিক সংকট ও মৎস্য চাষীদের কাছে চাহিদা হ্রাস পাওয়ার দরুণ মাছের পোনার দাম কমে গেছে। অপরদিকে বিদ্যুতের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় হ্যাচারীর ব্যয়ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাকৃতিক উৎস সমূহ থেকে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ না থাকায় ময়মনসিংহ জেলার ৪শ হ্যাচারীর ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
একই অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রেও। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে চিংড়ি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । চিংড়ি মরে যাচ্ছে তীব্র গরমে।
সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের জনৈক চিংড়ি চাষী জানান, গত মার্চে তিনি চিংড়ির ঘেরে ৬০ হাজার চিংড়ির পোনা ছেড়েছিলেন। কিন্তু তাপদাহের কারণে এর ৩০ শতাংশই মারা গেছে। সত্যি বলতে কি ‘পুকুরভরা মাছ ও গোয়ালভরা গরু’র দেশ বাংলাদেশে মৎস্য খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অন্যতম পন্থা হচ্ছে ফিশারী বা মৎস্য খামারে উৎপাদিত মাছ। মাছের প্রাকৃতিক উৎস খাল বিল হাওর ও নদী নালায় মৎস্য উৎপাদন দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে মোট ৪৬ লাখ মাছের মধ্যে ২৬ লাখ টন মাছই আসে ফিশারী বা মৎস্য খামার থেকে। এ অবস্থায় ফিশারীর মাছের উৎপাদন যদি হ্রাস পায়, তবে দেশে খাবারে আমিষের সরবরাহ কমে যেতে বাধ্য। আর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি বিশেষভাবে গণস্বাস্থ্যের ওপর। দেখা দেবে ব্যাপক পুষ্টি সমস্যা। সীমিত আয়ের লোকজন এখনো আমিষের জন্য মাছের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। বিভিন্ন জাতের মাংস ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকজন আমিষের জন্য ক্রমবর্ধমান হারে মাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
আমরা সকল প্রতিকূলতা ও সমস্যা মোকাবেলার মাধ্যমে দেশব্যাপী মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছি। ইতোমধ্যে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও টেকসই মৎস্য আহরণে ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। সামুদ্রিক মৎস্য ও আমাদের আমিষের একটি বড় উৎস। একইভাবে মাছের প্রাকৃতিক উৎস নদী নালা ও খাল বিল হাওরে পোনা মাছ নিধন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। আমরা এদিকে মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।