তুর্কী বীর এরদোগানের বিজয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৩, ১২:২৫:৫২ অপরাহ্ন
আত্মমর্যাদা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ইসলামী আদর্শ যে তুরস্কের মানুষের কাছে অগ্রাধিকার, তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে তুরস্কের সাম্প্রতিক নির্বাচনে। তুরস্কের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় পেয়েছেন দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। গত রোববার রাতে রাজধানী আঙ্কারার শহরতলীতে নিজের প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশে এরদোগান বলেন, ‘সাড়ে আট কোটি মানুষের পুরো দেশই আজ জিতেছে।’ এ সময় কুর্দিশ এক নেতা এবং এলজিবিটি কমিউনিটিকে সমর্থন করে তৈরী করা নীতির সমালোচনা করেন তিনি।
এবারের নির্বাচন ছিলো তুরস্কের ইসলামপন্থী মানুষের আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং পাশ্চাত্যের সেক্যুলার আদর্শ ও মূল্যবোধের মধ্যে এক ধরনের লড়াই। তুরস্ককে এশীয় ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি আধুনিক ইউরোপীয় দেশ বলা যায়। একদিকে ইউরোপ তাকে টানলেও এশীয় শেকড় ছেড়ে বা উপড়ে সে পাশ্চাত্যের ¯্রােতে গা ভাসাতে সে রাজী নয়।
তুরস্ক মুসলমানদের শাসনাধীনে আসার পর তুর্কী সুলতানরা তাদের শৌর্য বীর্য জ্ঞান গরিমা ও সুশাসনের মাধ্যমে তৎকালীন বিশ্বের প্রায় অর্ধেক অংশকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। সুলতান প্রথম আবদুল হামিদ থেকে শুরু করে সুলতান সুলেমান পর্যন্ত’ তুর্কী শাসকদের শক্তি সামর্থ্য জ্ঞান গরিমা ও সুশাসন বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। তাদের আমলে ইউরোপের হাঙ্গেরী পর্যন্ত বহু দেশ ছিলো তাদের নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া এশিয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা ছিলো তুর্কী সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তী সময়ে তুর্কী সা¤্রাজ্য ভেঙ্গে গেলেও বিশ্ব জুড়ে তুর্কী জনগোষ্ঠী ও তাদের প্রভাব আজো বিদ্যমান। যুক্তরাজ্য ও জার্মানীসহ বহু ইউরোপীয় দেশে লক্ষ লক্ষ তুর্কী জনগোষ্ঠীর বাস। ঐসব দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তাদের প্রভাব অনস্বীকার্য। এসব কারণে ইউরোপের খৃস্ট ধর্মাবলম্বী দেশগুলোর শাসক সম্প্রদায় তুরস্ককে হিংসার চোখে দেখে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতি ইউরোপীয় তুর্কী বংশোদ্ভুত জনগোষ্ঠীর অকুণ্ঠ সমর্থনকেও তারা সহজে মেনে নিতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো তুরস্কের একটি অংশে কুর্দি জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিশদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে বহু বছর ধরে। অপরদিকে এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করে দেশের অখন্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এটাও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর মাথাব্যথা ও বিরোধের কারণ। তারা এরদোগানকে সরিয়ে তাদের মতাবলম্বী শাসককে বসাতে চায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে। তাদের পন্থী ও অনুসারী প্রেসিডেন্ট হলে সমকামীতাসহ তাদের অনেকগুলো অপসংস্কৃতি চালু ও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যেই তারা মনে প্রাণে ইসলামপন্থী এরদোগানের পরাজয় চাইছিলো। ইতোপূর্বে তাদের পন্থী তুর্কী নেতা গুলেনকে ব্যবহার করে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। কিন্তু এরদোগানের প্রতি তুর্কী মুসলমানদের দৃঢ় সমর্থনের কারণে তা ব্যর্থ হয়। এবার নির্বাচনেও তারা এরাদোগান বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ নেতা কামালকে সমর্থন করে। দেশের সেক্যুলার জনগণ ও কপটিক খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সহায়তা নিয়ে তারা এরদোগান বিরোধী একটি বড় জনমত তৈরীর চেষ্টা করে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো অকাতরে অর্থ ব্যয় করে নির্বাচনকালে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ও ভূমিকম্পের বড় ক্ষয়ক্ষতিজনিত দুঃখকষ্ট ও দুর্ভোগ সত্বেও তুরস্কের ইসলামপন্থী আত্মর্যাদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী তুরস্ককে বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব তাদের প্রিয় নেতা এরদোগানকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছে। এরদোগান তাদের নেতা এবং মুসলিম বিশ্বেরও একজন শীর্ষ নেতা, এটাই তাদের কাছে সবচেয়ে গৌরব ও আনন্দের বিষয়। আমরাও তুর্কী বীর ও মুসলিম বিশ্বের সাহসী দরদী নেতা এরদোগানের বিজয়ে আনন্দিত। তাদের আন্তরিক অভিনন্দন।