নেতানেত্রীদের বোধোদয় হবে কি?
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৩, ১২:৩০:৩২ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার দলীয় এমপি’রা বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। তাই আমরাও বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার আশা করি। আমাদের উন্নয়ন সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। সরকার দলীয় এমপিদের উপরোক্ত বক্তব্য এদেশের জনগণের চিন্তাভাবনা ও মতামতেরই যে প্রতিধ্বনি এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ এখন বিশে^র বেশ কিছু শক্তিধর দেশের ভূরাজনৈতিক সংঘাত-সংঘষের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে তাদের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে পরিণত হতে। আর এজন্য বিশেষভাবে দায়ী এদেশের কিছু ক্ষমতালোভী নেতানেত্রী। তারাই সুযোগ করে দিয়েছে এদেশে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের। দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে এই সতেরো কোটি মানুষের দেশের বিরুদ্ধে কোন বাইরের দেশ বা শক্তির অবস্থান নেয়ার বা চোখ রাঙানির সাহস হতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এদেশ এখন বিদেশী কূটনৈতিক ও রাষ্ট্র প্রধানদের প্রভাব বিস্তার, স্বার্থের রশি টানাটানি ও মল্লযুদ্ধের উন্মুক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। এটা এদেশের গণতন্ত্র প্রিয় ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য যেমন লজ্জার তেমনি হতাশার বিষয়।
এদেশে যদি নিকট অতীতের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতো, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা এ নিয়ে কিছুই বলতে পারতো না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জন্য আলাদা ভিসা নীতি গ্রহণেরও সুযোগ থাকতো না, প্রয়োজন হতো না। বাংলাদেশের প্রতিবেশী অধিকাংশ দেশই দেশ পরিচালনা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই অনুসরণ করে। তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোন দেশ তো আলাদা ভিসা নীতি ঘোষণা করেনি। অনেকের প্রশ্ন, পাকিস্তানেও তো জনগণ শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার। সেদেশে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মতো আলাদা ভিসা নীতি ঘোষণা করেনি কেনো? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, ভারত ও পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি থাকলেও তাদের দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের কোন দলের দ্বারা এতো ব্যাপকভাবে দলীয়করণ হয়নি, যা বাংলাদেশে হয়েছে। এই দু’টি দেশের নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগ এখনো অনেক শক্তিশালী একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে দেশ দুটির এসব প্রতিষ্ঠান। গত এক যুগে বাংলাদেশে এসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শুধু কোমর নয়, সকল হাড্ডি গুড়ো করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে এগুলোর পক্ষে কোন স্বাধীন অবস্থান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া এসব দেশের মিডিয়াগুলো অনেক ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হলেও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কোন কালো আইন নেই ওইসব দেশে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের অসংখ্য সুযোগ ও অজুহাত সৃষ্টি করা হয়েছে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অভ্যন্তরীণ অনৈক্য বিবাদ চক্রান্ত ও রেষারেষি অতীতে ভারতসহ অনেক দেশকে বিদেশী আগ্রাসী শক্তির আগ্রাসনের সুযোগ করে দিয়েছে। ব্রিটিশ শাসকরাও এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতবর্ষকে দখল করে দু’শো বছর শাসন-শোষণ করে। দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও এটা সম্ভব হতো না। বর্তমানেও বাংলাদেশে বিদেশীদের তৎপরতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য, বিরোধ ও রেষারেষির কারণে। এটা বাংলাদেশের মতো মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জার, অত্যন্ত অপমানের বিষয়। আমরা যে কোন মূল্যে এই অপমান ও লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই। এ জন্য প্রয়োজন আমাদের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বিশেষভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতানেত্রীদের শুভ বুদ্ধির উদয়, ন্যূনতম দেশ প্রেম ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।