সংকট বৃদ্ধিতে আরেকটি উদ্যোগ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০২৩, ১২:৩০:১৯ অপরাহ্ন
ঋণখেলাপীদের নিকট থেকে যখন ঋণের অর্থ আদায় করতে মারাত্মক অসুবিধায় আছে ব্যাংকগুলো তখন ব্যাংক থেকে ঋণ পাবার বিষয়টি আরো সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এই নতুন আইন পাশ হলে যে কোন ব্যক্তি তার ঘটি বাটি দা কুমড়ো ইট পাথর ইত্যাদি বন্ধক রেখেও ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে। বর্তমানে শুধু স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-জমা, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধক রেখেই ঋণ নেয়া যায়।
জানা গেছে, অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সুযোগ রেখে জাতীয় সংসদে নতুন একটি বিল উঠেছে। গত মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) বিল-২০২২’ সংসদের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৫ দিনের সময় যিদয়ে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
অবশ্য এর আগে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় পার্টির জনৈক সদস্য বলেন, স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে দেয়া ঋণ আদায় যখন সম্ভব হচ্ছে না, তখন অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ প্রদান কতটুকু যৌক্তিক ও নিরাপদ। তিনি আরো বলেন, উত্থাপিত বিলটি ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের জন্য প্রয়োজন হলেও এটি বিপর্যয় ডেকে আনবে। কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু এই সংসদ সদস্যের আপত্তি কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বর্তমানে সংসদ ও সরকারের যে অবস্থা এতে স্পষ্ট যে, সংসদ সদস্যরা কোন বিল উত্থাপন করলে সেটা নিশ্চিতভাবে পাশ হবে। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় এমনটি ঘটছে। তাই ধরে নেয়া যায়, উক্ত বিলটিও পাশ হয়ে শীঘ্রই আইনে পরিণত হবে। আর এই আইন পাশ হলে যে কেউ অস্থাবর সম্পত্তি যেমন গরু ছাগল, গাছপালা, ফসল, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, মৎস্য, যে কোন চার্জ বা কিস্তিতে ক্রয় চুক্তি, কোম্পানীর শেয়ার, স্বর্ণ রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু জামানত রেখেও ব্যাংক ঋণ নিতে পারবেন। এ ধরনের ব্যবস্থা চালু হলে ব্যাংকের অর্থ অর্থাৎ জনগণের আমানত আরো অরক্ষিত হয়ে পড়বে এমন আশংকা সচেতন মহলের।
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘দিন যায়, ঋণ ও ঋণখেলাপী বাড়ে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক বছরে বেড়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে পরিকল্পনা করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত না দেয়া এবং ওই টাকা সরিয়ে ফেলা যেনো এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যাংকের লোকজন ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা জড়িত। এই টাকা তারা অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলে। তাদেরকে শাস্তির আওতায় না আনায় ঋণ খেলাপিরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেছে।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১৬ শতাংশ বেশী। বুঝাই যাচ্ছে, দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনদের অবস্থান যতোই দুর্বল ও নাজুক হচ্ছে, ততোই তারা তাদের লুটপাটের ক্ষেত্রগুলোকে বিস্তৃত ও সহতজতর করতে চাইছে। প্রস্তাবিত উক্ত আইনটিও একই উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, এমন অভিমত সচেতন মহলের।
তাদের মতে, এই আইন পাশ হলে দেশে ঋণখেলাপি দ্রুত আরো বাড়বে। কারণ এখন ব্যাংক ঋণ পেতে আর স্থাবর সম্পত্তি অর্থাৎ জমিজমা, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জামানত না রাখলেও চলবে। দৃশ্য অদৃশ্য কিছু জিনিসপত্র, নামে মাত্র কিছু সামগ্রী, জামানত রেখেই ঋণ পাওয়া যাবে। এগুলোর মূল্য কতো বা নিখাঁদ নির্ভেজাল কি-না, তা-ও যাচাই বাছাইয়ের তেমন সুযোগ থাকবে না এই আইনের ফাঁকফোকরের কারণে। ব্যাংকের কর্তা ব্যক্তিরা তথা ক্ষমতাসীন মহলকে রাজী করাতে পারলেই পাওয়া যাবে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ। এমনিতে এক সময়ের নামী দামী ও সমৃদ্ধ অনেক ব্যাংকে এখন তারল্য সংকট। অনেক ব্যাংকে আমানতের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশী। এ অবস্থায় অস্থাবর সম্পদ রেখে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু হলে দেশের ব্যাংকগুলো যে অধিকতর দ্রুতগতিতে দেউলিয়া হওয়ার পথে যাবে, এ নিয়ে সচেতন মহল এখনই শংকিত। এমন উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিতে শুধুই সংকটই বৃদ্ধি করবে, এমন অভিমত তাদের।