পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুঝুঁকি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৩, ১২:৩০:৩৩ অপরাহ্ন
বৃষ্টি বাদলের দিন এখন। কখনো হালকা, আবার কখনো ভারী বর্ষণ হচ্ছে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের শংকা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও পাহাড় ধসের আশংকা বাড়ছে। গত বছর বর্ষা মৌসুমে শুধুমাত্র মে-জুন মাসেই ২৫ দিনে সিলেট জেলার ৫ উপজেলায় পাঁচটি টিলা বা পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় ৫ জন। জেলার জৈন্তাপুর সহ বিভিন্ন উপজেলায় টিলার পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। শুধু জৈন্তাপুর উপজেলায়ই বাস করছে আড়াই শতাধিক পরিবার।
জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেলার আখালিয়া, ব্রাহ্মণশাসন, দুসকি, টিলারগাঁও, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, বালুচর, পাঠানটুলা, গুয়াবাড়ি, জাহাঙ্গীর নগর ও আখালিয়া বড়গুল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা টিলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। বাসিন্দারা কেউ ঘর বানিয়ে ভাড়া নিয়েছে, আবার কেউ কেউ নামমাত্র টাকা দিয়ে দখলদারদের নিকট থেকে জায়গা কিনেছে। বসবাসকারীদের মধ্যে নি¤œ আয়ের লোকজনই বেশী। প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস বিভিন্ন টিলার পাদদেশে। এছাড়া গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু পাহাড় টিলা। সেখানে টিলার নীচে বাড়ি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
চলতি মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হলেও এখন প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। এতে টিলার নীচে বসবাসকজারীদের টিলা ধসে প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ‘বেলা’ সিলেটের মতে, সিলেটের ৬ উপজেলাসহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২০১১ সালে আদালতের রীটে ১ হাজার ২৫ টি টিলার পরিসংখ্যান দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে অনেক টিলার অস্তিত্বই নেই। ভূমিখেকোরা টিলা কেটে কেটে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। প্রশাসনের খুব একটা তদারকি নেই। বেলার মতে, টিলা কেটে ফেলার ফলে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে সিলেট পরিবেশ অধিদপপ্তরের বক্তব্য হচ্ছে, টিলা কিংবা পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপপ্তরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অপর এক পরিসংখ্যান অনুসারে, সিলেটে বিভিন্ন পাহাড়-টিলার পাশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতি বছর বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে পাহাড় টিলা ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, গত দেড় দশকে সিলেটের ৬১ টি টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। জেলার ৪১২ টি পাহাড় টিলার মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৩৫১ টি। সরকারী হিসাবে ধ্বংস হওয়া টিলার সংখ্যা ৬১ বলা হলেও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে, এমন বেসরকারী সংস্থাগুলোর দাবি, গত দেড় দশকে শতাধিক টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে মোট টিলার সংখ্যা ১ হাজার ৭৪৫ টি। টিলা ভূমির পরিমাণ ২ হাজার ৭৪৯.৫০ একর। এর মধ্যে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বেশীর ভাগ টিলা। এসব এলাকার টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসের বিষয়ে প্রশাসনের উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন। যাতে টিলা ধসের ফলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করা যায়। আমরা এদিকে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।