কোন সুখবর নেই সাধারণ মানুষের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:৫৮ অপরাহ্ন
গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। আর গত ৩ জুলাই দেশের ইতিহাসে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন ঘটেছে। এর ফলে একদিনে স্থানীয় মুদ্রার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ টাকা ৮৫ পয়সা অবমূল্যায়ন হয়। একথা অনস্বীকার্য যে, ডলারের সাথে টাকার মূল্যমানের ওপর এদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক কিছুই নির্ভর করে। টাকা দুর্বল হলে আমদানি ব্যয় বেড়ে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, কারণ বাংলাদেশ বিশেষভাবে আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় সাম্প্রতিককালে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য হ্রাসের ফলে এদেশের অর্থনীতিতে রীতিমতো দুর্যোগ নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে হাহাকার, হতাশা। যারা কিছু অর্থকড়ি সঞ্চয় করেছিলেন। তাদের অর্থের মানও কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। যারা বিভিন্ন মেয়াদে টাকা আমানত রেখেছিলেন লাভের আশায় এমনকি অনেকে ব্যাংকে বা অন্যান্য আর্থিক সংস্থায় গচ্ছিত অর্থের লাভের ওপর জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করেন তারাও পড়েছেন বিপাকে।
গচ্ছিত অর্থের সুদ বা মুনাফা নিয়ে আগে সংসার চললেও এখন আর চলা সম্ভব হচ্ছে না পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির কারণে। যদি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের হারের প্রতি লক্ষ্য করা যায়, তবে দেখা যাবে গত এক বছরে পণ্য ও সেবার মূল্য কমপক্ষে গড়ে ১৫/১৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই মূল্যবৃদ্ধি আরো বেশী। অনেক পণ্যের দাম দেড় থেকে দ্বিগুন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার সরকারী চাকুরীজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বৃদ্ধির শংকা দেখা দিয়েছে। দেখা গেছে, যখনই সরকারী চাকুরীজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়, তখনই বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়ে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকারী চাকুরীজীবীদের বেতন না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকের মতে, অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীা বিশেষভাবে নি¤œ আয়ের কর্মচারীদের আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে টানতে হচ্ছে। তাদের বেতন না বাড়ালে চলা মুশকিল হবে তাদের পক্ষে। এমনকি অনেক স্বল্প বেতনের কর্মচারী মাত্র পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধিতে সন্তুষ্ট নন। মূল বেতনের ওপর বেতনবৃদ্ধি করায় যাদের মূল বেতন বেশী শুধুমাত্র তারাই লাভবান হবেন। অপরদিকে বেসরকারী চাকুরীজীবীসহ সাধারণ জনগণের ভাগ্যে এক পয়সাও বৃদ্ধির সুযোগ নেই। অথচ এরাই জনসংখ্যার বড় অংশ। পঞ্চাশ লাখ সরকারী চাকুরীজীবী বাদ দিলে বাকী সবাই বেসরকারী চাকুরীজীবী ও সাধারণ জনগণ। সরকারী চাকুরীজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ মোকাবেলা করতে হবে তাদের।
সর্বোপরি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। ফলে অদূর ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের কোন সম্ভাবনাও নেই, এমন অভিমত অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের। আর মূল্যস্ফীতি না কমলে সাধারণ মানুষের স্বস্তিতে জীবনযাত্রা নির্বাহও সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের মাঝে শুধুই হতাশা বাড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্যে অনেকটাই স্থিতিশীলতা আসতো, মূল্যস্ফীতির চাপ কম অনুভূত হতো। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে পণ্যমূল্যকে স্বাভাবিক করার কোন উদ্যোগ নিতেও রাজী নয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ তথা ক্ষমতাসীন মহল। মুখে তাদের অসহায়ত্বের কথা এবং ক্রাইসিস বৃদ্ধির কথা বললেও এর নেপথ্যে আছে তাদের স্বার্থের ভাগাভাগির বিষয়টি। তাই এক্ষেত্রেও আশার কিছু দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি এক অভূতপূর্ব জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যার চাপ প্রায় সর্বাংশে অনুভূত হচ্ছে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের ওপর। প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থার অবসান হবে কবে, কীভাবে?