দূর হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোরতা?
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:১০ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনঃ শাস্তি কমিয়ে জামিনযোগ্য হতে পারে কিছু ধারা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারার বিধান অনুযায়ী কেউ ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালালে ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আর এই আইনের ২৮ নং ধারা অনুযায়ী, কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে ৭ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এই দু’টিসহ অন্ততঃ ১৯ টি ধারার অপরাধ অজামিনযোগ্য। এ কারণে এ কারণে উল্লেখিত দু’টি ধারা বাতিলসহ বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তর। একই দাবি দেশে সাংবাদিক ও সুধী সমাজের প্রতিনিধিদেরও। এসব দাবির মুখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কিছু ধারায় শাস্তি কমিয়ে দন্ডবিধির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার চিন্তা করছে সরকার। পাশাপাশি কিছু ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য করারও চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
গত ১৯ জুন আইনমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একটি ‘টেকনিক্যাল নোট’ দিয়েছে। সেটির পর্যালোচনাও প্রায় শেষ। দ্রুতই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। লক্ষণীয় যে, ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল আইনটি পাশ হওয়ার পর থেকেই এর ২১ ও ২৮ নম্বর ধারা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের দপ্তর। এমনকি এই দুটি ধারায় আগে যতো মামলা হয়েছে এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেও বলা হয়।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের মতো একটি গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি আইন প্রণয়ন অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতে, এই আইন বিশ্বের একটি নিকৃষ্টতম কালো আইন। এই আইনের কঠোরতার পাশাপাশি যে বিষয়টি সবচেয়ে আপত্তিকর তা হচ্ছে, এর ধারাগুলোর অস্পষ্টতা। সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় এক্ষেত্রে সামান্য দোষী যে কোন ব্যক্তিকে এসব ধারার অধীনে এনে অতিশয় গুরুদন্ড প্রদানের সুযোগ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিগত বছরসমূহে এভাবে এই আইনের বিস্তর অপপ্রয়োগ হয়েছে, এমন অভিযোগ ব্যাপক। বর্তমান ডিজিটাইজেশনের যুগে ইন্টারনেটভিত্তিক অপরাধের বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন ও মানসম্মান অনেক ক্ষেত্রে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ডিজিটাল আইন থাকা দরকার। এদিক দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা অত্যন্ত যুগোপযোগী ও কার্যকর, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে এই আইনের উপরোক্ত বেশ কিছু ধারা যেমন অতিরিক্ত কঠোর তেমনি অস্পষ্ট, যার অপপ্রয়োগের আশংকা ব্যাপক। কার্যত: এগুলোর অনেক অপপ্রয়োগও হয়েছে ইতোমধ্যে। এগুলো বাতিল ও সংশোধন প্রয়োজন, প্রয়োজন বিভিন্ন ধারার অস্পষ্টতা দূরীকরণ। এই দাবি শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরই নয়, বরং এদেশের সাংবাদিকসহ সকল সচেতন মানুষের।
কিছুদিন আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকের পর আইন শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে জনৈক নারীর মৃত্যু এবং একটি পত্রিকার সাংবাদিককে আটকের পর ওই আইনে মামলা দেয়ায় আইনটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিশ্লেষকরা এই আইন বাতিলের দাবি করেছেন, সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, এই আইনের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ধারা সংশোধন করা অতি জরুরী। বিশ্লেষকরা আরো বলেন, আইনটি অপব্যবহার করার জন্যই এখনো টিকিয়ে রাখা হয়েছে, কারণ, এই আইন দিয়ে সহজেই যে কাউকে হয়রানি করা যায়।
আর্টিক্যাল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান বলেন, সরকার একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরী করতে আইন আইনটি ব্যবহার করছে। যা-ই হোক, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগানো এবং এর খারাপ ও ক্ষতিকর দিকগুলো দূর করে এক্ষেত্রে একটি মানবিক ও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হোক, এমন প্রত্যাশা আমাদের।