একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বটে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:০৮ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে ট্রেনের একজন কাউন্টারম্যান ও এক টিকেট চোরাকারবারীকে জেল জরিমানা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউএনও ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইউএনও যাত্রী সেজে এই অভিযান পরিচালনা করেন। টিকেট কালোবাজারিকে ৪ মাসের কারাদন্ড ও কাউন্টারম্যানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে। এর আগে জেলে, ফেরিওয়ালা ইত্যাদি সেজে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের খুনিসহ বিভিন্ন অপরাধীকে আটক করতে দেখা গেছে।
এদেশের প্রশাসন বিশেষভাবে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে যে অনেক গুরুতর অপরাধের ঘটনা উদঘাটন ও অপরাধীদের আটকে সক্ষম, এটা এসব ঘটনা থেকে প্রমাণিত। একটি সুশৃংখল ও সুশাসনের দেশে প্রশাসন ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে এমনি আচরণই কাম্য, এমনই দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত।
কিন্তু মাঝে মাঝে এমন আশাপ্রদ ও প্রশংসনীয় ঘটনা লক্ষ্য করা গেলেও সামগ্রিকভাবে দেশে এমন ইতিবাচক তৎপরতার ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান। প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনী তৎপর হলে বা হতে পারলে বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিমুক্ত সুখী ও শান্তির দেশ হতে পারতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বাধীনতার পর অর্ধ শতাব্দি অতিক্রান্ত হলেও এদেশের এসব ক্ষেত্রে কোন উন্নতি ও অগ্রগতি হয়নি। তাই বিচ্ছিন্ন দু’একটি সাফল্যের ঘটনাকে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা যায় না। আমরা উপরোক্ত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের জন্য ইউএনও সহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভূমিকার প্রশংসা করছি। এর পাশাপাশি গোটা দেশব্যাপী বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্মের বিরুদ্ধে এমনি অভিযান ও তৎপরতার আহবান জানাচ্ছি।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ এক সময় প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় উন্নত ছিলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিশেষভাবে দুর্নীতি ছিলো নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বর্তমানে দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। সম্প্রতি একটি জাতীয় পত্রিকায় ‘দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দুর্নীতি আরো বাড়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ছিলো ১৩তম।
টিআইবি’র প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকায় ১০০ স্কোরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর প্রাপ্তির ক্রম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৪৭তম। প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান কেবল আফগানিস্তানের ওপরে। শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানও দুর্নীতি দমনে ইদানিং বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি নামক গভীর খাদের অতলে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে উপরোক্ত ইউএনওর অভিযানের ঘটনা আমাদের দেশের জন্য আলোকসঞ্চারি ও প্রেরণাদায়ক। যখন ক্ষমতাসীন নেতানেত্রী ও আমলাদের অধিকাংশই দুর্নীতিতে গভীরভাবে নিমজ্জিত তখন উপরোক্ত কর্মকর্তার দৃষ্টান্ত অনুসরণে যদি দেশের সকল কর্মকর্তা দুর্নীতি ও অপরাধ দমনে উদ্যোগী হন, তবে অচিরেই বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কমে যাবে অন্যান্য অপরাধ ও অপকর্মও।
একথা অনস্বীকার্য যে, দেশকে দুর্নীতি ও অপরাধমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ক্ষমতাসীন নেতানেত্রীদের দায়দায়িত্ব সবচেয়ে বেশী। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন মহলের অধিকাংশ নেতানেত্রীর অনিয়ম ও দুর্নীতি এখন শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা বিশ্বে আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে। তারা যে দুর্নীতি করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন এমন নয়, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হাজার হাজার এমনকি লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে এবং এখনো এটা অব্যাহত। এ অবস্থায় শুধু কয়েকজন ইউএনও ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় গোটা দেশ থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ক্ষমতার এই শীর্ষ পর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে।
আমরা উপরোক্ত দুর্নীতি বিরোধী অভিযান ও উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। একই সাথে নেতৃত্ব ও প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা ও অব্যাহত রাখার আহবান জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি।