ডলারের দাম বৃদ্ধি, দুর্ভোগে জনগণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘আন্তঃ ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্তঃ ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন ডলারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর একই পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আগে এই দুই দরের মধ্যে বেশ ব্যবধান থাকতো। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে আন্তঃ ব্যাংকের গড় দামে ডলার বিক্রি করতো। এখন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম একই হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও ডলারের দাম বাড়াতে হয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তঃ ব্যাংকে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকার বেশী হতে পারবে না। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, আন্তঃ ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০৯ টাকা করে ডলার কিনে তা আমদানি ব্যয় মেটাতে ১০৯ টাকা করে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করলে ব্যাংকের ক্ষতি হবে। কারণ এ খাতে ব্যাংকের সেবা প্রদানের বিপরীতে যে খরচ হচ্ছে, তা ওঠছে না। আন্তঃ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে আমদানিতেও এর দাম বাড়বে। নগদ ডলারের দামও বেড়েছে। এখন সর্বোচ্চ ১১২ টাকা করে কোন কোন ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করছে। তবে বেশীর ভাগ ব্যাংকই বিক্রি করছে ১১০ থেকে ১১১ টাকার মধ্যে।
লক্ষণীয় যে, গত এক বছর যাবৎ ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত বছরের ১ জুন এক মার্কিন ডলার বিক্রি করা হয়েছিলো ৮৯ টাকা। আর ২০২৩ সালের ৪ জুলাই ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮.৮৫ টাকায়। বর্তমানে এটা উন্নীত হয়েছে সর্বোচ্চ ১১১ টাকায়। অনেকের মতে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম আরো বেশী। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ডলার প্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। এতোদিন যাবৎ বাংলাদেশে রফতানি, রেমিট্যান্স ও আমদানির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা রেইট ছিলো ডলারের। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী সর্বক্ষেত্রে ডলারের একক দর রাখতে গিয়ে টাকার মান বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক এতোদিন জোর করে ডলারের দাম টাকার বিপরীতে কমিয়ে ধরে রেখেছিলো। কারণ ডলারের দাম বাড়লে তা আমদানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব বলে তাদের ধারণা ছিলো। তাদের মতে, সেটা ঠিক নয়। ডলারের দাম ধরে রেখে কাংখিত মাত্রায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সাথে রয়েছে আইএমএফ এর শর্তও। যার ফলে সেই অবস্থান থেকে তাদেরকে সরে আসতে হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের মুদ্রা অর্থাৎ টাকা ভারত, চীন, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশের তুলনায় ডলারের বিপরীতে অতি মূল্যায়িত ছিলো। এখন হঠাৎ করেই ছেড়ে দেয়ার কারণে টাকার মান দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এটা আরো আগে ধাপে ধাপে করা উচিত ছিলো। তাহলে ধীরে ধীরে সহনীয় হয়ে যেতো।
একথা অনস্বীকার্য যে, সম্প্রতি ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে সব ক’টি আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের জন্য ডলারের মূল্যবৃদ্ধির এই পরিণতি স্বাভাবিক। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সাথে এদেশে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘনিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম গত এক বছরে কমপক্ষে ২৫/৩০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু কিছু পণ্যের আমদানি পণ্যের দাম দেড়গুন থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে প্রচন্ড আর্থিক সংকটে পড়েছেন দেশের সিংহভাগ সীমিত আয়ের মানুষ। অপরদিকে ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলেও আমদানি পণ্যের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, দাম বাড়ছে এগুলোর। আর এই সুযোগ নিচ্ছে অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাও। ডলারের দাম যে হারে বাড়ছে, এতে আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরো অনেক বাড়তে পারে, এমন আশংকা সচেতন মহলের। আর সংকট দূর হওয়ার আপাতত: কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তাই জনমনে বাড়ছে শুধুই হতাশা। গোটা বিশ্বে যখন জ্বালানী তেল ও ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম অনেক কমে এসেছে, তখন বাংলাদেশের মানুষ মূল্যহ্রাসের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত শুধু ডলার সংকটের কারণে। যে সংকট মূলতঃ সৃষ্টি হয়েছে দেশের আমদানি নির্ভরতা ও ডলার ঘাটতি তথা ডলার পাচারের কারণে।