রেলওয়ে হোক প্রকৃত কল্যাণধর্মী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:১১ অপরাহ্ন
গতকাল জাতীয় মিডিয়ায় ‘রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে ৬৪ জেলা’ শিরোনামে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে রেলপথ স্থাপন করে হাইস্পীড রেলপথ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সেকশনে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনেও বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, পর্যায়ক্রমে সব জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। সড়কপথের মতো রেলওয়ে থাকবে সব জেলায়। প্রাথমিকভাবে ৭টি জেলা ট্রেন সুবিধা পাবে। এগুলো হচ্ছে কক্সবাজার, নড়াইল, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, মাগুরা ও বাগেরহাট। আগামী বছরের মধ্যে এই ৭টি জেলাকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে চাইছে সরকার।
উল্লেখ্য, ৪৩ জেলায় রেলপথ রয়েছে। বর্তমানে রেলওয়ের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সমীক্ষা কার্যক্রম চলছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে আরো ৮টি জেলা রেলপথের আওতায় আসবে। সাতক্ষীরা, বরিশাল, রাঙামাটি, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি, বরগুনা, পিরোজপুর ও মেহেরপুরকে সংযুক্ত করতে সমীক্ষার কাজ চলছে। রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যানের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ বছর। ২০১৬ সাল থেকে ২০৪৫ সাল। এ সময়ের মধ্যে লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, মানিকগঞ্জ, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলাও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। তার মানে ২০৪৫ সালের মধ্যে ৬৪ টি জেলা রেলওয়ের আওতায় আসছে।
বলা বাহুল্য, যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ে বাংলাদেশের একটি অন্যতম পরিবহন ব্যবস্থা। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে এই ব্যবস্থা যেমন জনপ্রিয় তেমনি নিরাপদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, গত কয়েক দশকে জাপান ও চীনের কথা বাদ দিলেও প্রতিবেশী ভারতসহ এশিয়ার অনেক উন্নয়নশীল দেশ রেলওয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সেসব দেশে রেলওয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে কয়েক দশক আগে যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশ বর্তমানে রেলওয়ে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী ও ক্ষমতাসীন নেতানেত্রীদের লুটপাটের অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে আয় করেছে ১ হাজার ১৩ কোটি টাকা। অপরদিকে ওই সময়ে ব্যয় করেছে ৬ হাজার ২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ টাকা ব্যয় করে ১ টাকা আয়। এভাবেই চলছে রেলওয়ে। এছাড়া ইতোপূর্বে ইতোমধ্যে ডেমো ট্রেনসহ অনেক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বিপুল অর্থ লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে এই খাতে।
বর্তমানে বিভিন্ন কারণে দেশের সড়কপথগুলো মারাত্মক দুর্ঘটনা প্রবণ ও বিপজ্জনক হয়ে ওঠেছে। এ অবস্থায় যাত্রীরা রেলওয়েকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ব্যবস্থা মনে করছেন যোগাযোগ ক্ষেত্রে। কিন্তু টিকেট কালোবাজারি, বিনা টিকেটে যাত্রী ওঠানো ও আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধার ঘাটতির দরুণ ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেক যাত্রী রেল ব্যবহার করতে পারছেন না। ভারতসহ প্রতিবেশী অনেক দেশ তাদের রেলওয়েকে আধুনিক ও উন্নত করে যাত্রীসেবার পাশাপাশি বিপুল রাজস্ব আয় করছে। আমরা বাংলাদেশ রেলওয়ের বিস্তৃতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বর্তমান মহাপরিকল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে এসব প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা হয়ে ওঠবে। গৃহীত মহাপরিকল্পনা ও মেগা প্রকল্প অন্যান্য অনেক প্রকল্পের মতো বিপুল সরকারী অর্থ লুটপাটের মাধ্যমে ও উপলক্ষ না হয়ে প্রকৃত কল্যাণধর্মী উদ্যোগ হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।