আর্থিক সংকটেও বাড়ছে বিলিয়নেয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:৪৪ অপরাহ্ন
সম্প্রতি জুরিখভিত্তিক ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের গবেষণা উইং-এর ‘গ্লোবাল ওয়েলথ্’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে ৫ থেকে ১০ কোটি ডলার অর্থাৎ ৫৫০ কোটি থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ আছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ জনে। ১ থেকে ৫ কোটি ডলার অর্থাৎ ১১০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিলো ৪২৩ জন। সাম্প্রতিককালে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে তাদের সম্পদের পরিমাণ আরো অনেক বেড়েছে।
লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশে লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ, রেমিট্যান্সে ভাটা সত্বেও একশ্রেণীর মানুষ অর্থে বিত্তে ফুলে ফেঁপে ওঠতে দেখা গেছে বিগত বছরগুলোতে। এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকটির তথ্য অনুসারে দেশীয় মুদ্রায় ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি বা এর ওপরে সম্পদশালী ব্যক্তির সংখ্যা বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৭০০, যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে, স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকার বেশী, যা জিডিপি’র ১০ শতাংশ।
লক্ষণীয় যে, গত এক বছরেরও বেশী সময় ধরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এটা সরকারী হিসাব, প্রকৃতপক্ষে এটা আরো অনেক বেশী। ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুসারে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে আমদানির পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে উৎপাদনমুখী শিল্পের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার শংকা তৈরী হয়েছে। ক্রমাগত ক্রয়ের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে ওঠছে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে (বিপিএম৬) দেশের রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় বছর শেষে ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে ১২ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থ বছরে প্রত্যাশিত হারে প্রবৃদ্ধি হয়নি।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম আরেক খাত রেমিট্যান্স পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক নয়। দেশের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতিও নাজুক। সুশাসনের ঘাটতির পাশাপাশি খেলাপি ঋণ খাতটির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের শেষে দেশের ব্যাংক খাতে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে অর্থনীতির এসব সংকটের আঁচ বা ছোঁয়া লাগছে না দেশের উপরোক্ত বিলিনেয়ারদের গায়ে। সম্পদের কেন্দ্রীভবনকে বাংলাদেশে সুষম উন্নয়নের পথে অন্তরায় হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ডঃ সালেহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ধনসম্পদ যাদের আছে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের সংযোগও বেশী। এ সংযোগ রাজনীতি থেকে শুরু করে আমলাতন্ত্র, ব্যাংক সব পর্যায়ে তাদেরকে প্রভাবশালী করছে। ফলে তারা ব্যাংক ঋণের সুবিধা পায়। ব্যাংক খাতে দেখা যায়, ঋণের বেশীর ভাগই কেন্দ্রীভূত বড় গ্রাহকদের মাঝে। অঞ্চলভিত্তিক হিসেবে দেখলে দেখা যাবে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের বেশীর ভাগ এলাকাই বঞ্চিত। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, ব্যাংক, ওষুধ-এসব খাতেই কয়েকটি গ্রুপের মনোপলি বা একচেটিয়া ব্যবসা। সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে, অন্যদিকে দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে।
সচেতন মহলের অভিমত, দেশে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী রাতারাতি ধনী হয়ে যাচ্ছেন। আবার ব্যবসা বাণিজ্য নেই এমন ব্যক্তিদের সম্পদও ফুলে ফেঁপে ওঠছে। নীতি নৈতিকতা ও আইন অনুসরণ করে কোন দেশেই রাতারাতি বড়লোক হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং বেআইনী কর্মকান্ডে যুক্ত হলেই তা সম্ভব। তাই উন্নয়নের সুফল সবশ্রেণী পেশার মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজন কার্যকর সুশাসন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটা করবে কে?