রিজার্ভে চাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:৫৯ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা সমালোচনা বিতর্ক ও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেশ জুড়ে। কিন্তু এর চেয়ে বড় বিপদ এগিয়ে আসছে আগামী দিনগুলোতে। আর সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট। এমন অভিমত সচেতন মহলের। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ‘ফিচ রেইটিংস’ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি রিজার্ভের পতন ও ডলার সংকটকে চিহ্নিত করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নেয়া পদক্ষেপ বিদেশী আনুষ্ঠানিক ঋণদাতাদের ক্রমাগত সহায়তা ও রিজার্ভের পতন ও স্থানীয় বাজারে ডলার সংকট কমাতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ডঃ সালাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির খারাপ অবস্থার জন্য এখন শুধু কভিড ও ইউক্রেইন যুদ্ধকে দায়ী করার সুযোগ আর নেই। বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যের চেয়েও অভ্যন্তরীন সংকটের মাত্রা অনেক বেশী। দেশের ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের শৃংখলা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। মুডি’স এবং এসএন্ডপি’র মতো ক্রেডিট রেইটিং প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে দেশের ঋণমানকে নেতিবাচক করে দিচ্ছে। এগুলো অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এর আগে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেইটিং বা ঋণমান কমিয়েছিলো আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান মুডি’স এন্ড এসএন্ডপি গ্লোবাল। এর মধ্যে সর্বশেষ গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ নিয়ে মূল্যায়ন প্রকাশ করেছিলো এসএন্ডপি গ্লোবাল। সংস্থাটির মূল্যায়নেও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং ‘বিবি মাইনাস’ নির্ধারন করা হয়েছিলো। ওই সময় এসএন্ডপি গ্লোবালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো বিদেশী ঋণ ও তারল্য পরিস্থিতি আরো প্রতিকূলে গেলে এ ঋণমান আরো কমে যাবে। এছাড়া আগামী বছর দেশের ডলার পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আরো চাপের মুখে পড়তে পারে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে, মুডি’স এবং এসএন্ডপি গ্লোবাল ঋণমান নামিয়ে দেয়ার পর থেকে দেশের আমদানি-রফতানি তথা বৈদেশিক বাণিজ্যের শর্তগুলো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গিয়ে বাড়তি ফী ও শর্তের মুখে পড়তে হচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলোকে। একই সঙ্গে বেসরকারী খাতের বিদেশী ঋণের সুদ ও বাড়তে শুরু করেছে। এতে এ ধরনের ঋণের মেয়াদ কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন শর্ত আরোপিত হচ্ছে। বিশ্বের সুপরিচিত বৃহৎ ব্যাংকগুলোও বাংলাদেশী ব্যাংকের জন্য ক্রেডিট লাইন বা ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছে।
ফিচ-এর সর্বশেষ মূল্যায়নে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে তেমন কোন আশাবাদ প্রকাশ পায়নি। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপর চাপ আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। আমদানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতির কারণে মোট রিজার্ভ (গ্রস) নেমে এসেছে ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে। আইএসএফ এর বিপিএম-৬ মান অনুসরন করে এক্সপোর্ট ডেভেলাপমেন্ট ফান্ড ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলাপমেন্টের জন্য বরাদ্দ বাদ দিলে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৫ বিলিয়নে। বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, বছরের শেষে রিজার্ভের পরিমাণ থাকবে ৩ মাসের বৈদেশিক লেনদেন পরিচালনার উপযোগী।
এছাড়া ডলারের নিয়ন্ত্রিত বিনিময় হার, জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানিতে বিধি নিষেধ শিথিলের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা এখন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠেছে। জুন থেকে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য রিজার্ভের যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলো, তা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ।
দেশে ডলারের অন্যতম উৎস প্রবাসী রেমিট্যান্স এবং পোশাক রফতানি থেকে আয় ও দ্রুত হ্রাস পেতে দেখা যাচ্ছে। ফলে রিজার্ভ নামছে দ্রুতগতিতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমদানি ও ঋণ পরিশোধের জন্য ডলার পাওয়া মুশকিল হবে। এখনই ডলারের জন্য হাহাকার চলছে। ডলারের ঘাটতি যতো প্রকট হবে ততোই আমদানি পড়বে হুমকির মুখে। এতে দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে। হাহাকার ও হতাশা বাড়বে জনগণের মাঝে।