সুশাসনে সমৃদ্ধ আফগান অর্থনীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:০৫ অপরাহ্ন
গতকাল বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ‘বিশ্বসেরার তালিকায় উঠে এলো আফগান মুদ্রা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানী চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা মুদ্রা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আফগান মুদ্রার দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশের জন্য এটা অনেক বড় অর্জন বলেই সচেতন মহল ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালেবান। এর মধ্য দিয়ে প্রায় দুই দশকের যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান ঘটে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ও আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এসব ঘটনায় ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ে তালেবান শাসকগোষ্ঠী। লক্ষণীয় যে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যেতো ৭৭ দশমিক ৩০ আফগানী। তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহণের একদিন আগে এক ডলারের বিনিময় মূল্য ছিলো ৮৮ আফগানী। ২০২১ সালের নভেম্বরে তা পৌঁছে ১৩০ আফগানী। এরপরই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে আফগানী অর্থাৎ আফগান মুদ্রা তথা আফগান অর্থনীতি। আর এবার আফগান মুদ্রার মান উঠে এসেছে সেরার তালিকায়। বৈশ্বিক মুদ্রা বাজারের রেইট অনুযায়ী, বাংলাদেশী টাকার চেয়েও শক্তিশালী অবস্থানে এখন আফগানিস্তানের মুদ্রা। যেখানে ৭৭ আফগানিতে মিলছে ১ ডলার, সেখানে বাংলাদেশী মুদ্রায় গুনতে হচ্ছে ১১২ টাকা। জানা গেছে, ২ বছর আগে ক্ষমতায় আসা তালেবান শাসকেরা আফগানীকে শক্তিশালী করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ‘আফগান রাজস্ব সংগ্রহ ও রপ্তানি শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তালেবান শাসনের অধীনে রপ্তানি বৃদ্ধি, স্থিতিশীল বিনিময় হার এবং শক্তিশালী রাজস্ব সংগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক ২০২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আফগান অর্থনীতির পরিস্থিতি আশ্চর্যজনকভাবে উচ্চমুখী হয়েছে বলে মূল্যায়ন করে।
অনেকের মতে, দুর্নীতি হ্রাস বিশেষভাবে সুশাসনের ফলে এতো অল্প সময়ে আফগান অর্থনীতি এতোটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আফগানিস্তানে মার্কিন মদদপুষ্ট পুতুল সরকারের পতনের সময় এবং আগে অনেকে বলেছিলেন, তালেবানরা দেশ চালাতে পারবে না। তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর কিছুকালের মধ্যেই দেশে বিপর্যয় দেখা দেবে, ভেঙ্গে পড়বে অর্থনীতি এবং যুদ্ধবিগ্রহে বিশৃঙ্খল ও অকার্যকর হয়ে যাবে আফগানিস্তান। এসবই ছিলো কট্টর মুসলিম শাসনাধীন আফগানিস্তানের প্রতি এক ধরনের হিংসা ও বিদ্বেষপ্রসূত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ। সততা ও দুর্নীতিমুক্ত শাসন যে একটি দেশকে কীভাবে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আফগানিস্তান। ইসলামী আদর্শের প্রকৃত অনুশীলন যে একটি দেশকে সুখ শান্তি ও শৃংখলার নিশ্চয়তা দিতে পারে, এর আলামত স্পষ্ট হয়েছে তালেবানের অধীন আফগানিস্তান থেকে। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই এখন।