এ কেমন নিষ্ঠুরতা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩০:৩০ অপরাহ্ন
গতকাল স্থানীয় মিডিয়ায় ‘ছাতকে বড় ভাইয়ের স্বীকারোক্তিতে ছোট বোনের বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার’ শিরোনামে একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি শুধু সিলেট নয়, গোটা দেশের সকল সচেতন মানুষকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। জানা গেছে, আপন বড় ভাইয়ের স্বীকারোক্তিতে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া ছোট বোন ৯ বছরের শিশু ইভা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ খুনের ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টা পর গত শুক্রবার রাতে ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুরশি গ্রামের লিটন মিয়ার ধানক্ষেত থেকে ইভার খন্ডিত মাথাটি উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের বড় ভাই রবিউল হাসানের তথ্যের ভিত্তিতে খন্ডিত মাথাটি উদ্ধার করা হয়। ইভা উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুরশি গ্রামের মুশাহিদ আলীর মেয়ে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর উপজেলার দক্ষিণ কুরশি এলাকায় খালেদ নূর নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় ইভার মা ও বড় ভাই রবিউলকে আসামী করা হয়। ফলে রবিউলকে কারাগারেও যেতে হয়। সম্প্রতি রবিউল কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই রবিউলের সহযোগিতায় ইভাবে খুন করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে বড় ভাই রবিউল হাসানের স্বীকারোক্তিতে ইভার মৃতদেহ পাওয়ার স্থান থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে তার কাটা মাথাটি পুলিশ উদ্ধার করে।
উপরোক্ত ঘটনাটি যেমন হৃদয় বিদারক তেমনি শংকা সৃষ্টিকারী। এতে একদিকে যেমন সমাজে হিংসা বিদ্বেষের ভয়াল রূপ ফুটে ওঠেছে, তেমনি সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের মারাত্মক অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে ওঠেছে। এ যেনো হিংসা বিদ্বেষের কাছে ¯েœহ মমতার এক মর্মান্তিক পরাজয়, এমন অভিমত সচেতন মহলের। এই ঘটনা যে সম্পূর্ণ অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন এমন নয়। কয়েক বছর আগে একই জেলার দিরাই উপজেলায় এ ধরনের অপর একটি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে জনৈক ব্যক্তি তার নিজ সন্তানকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। দেশের অন্যান্য স্থানেও এ ধরণের কয়েকটি ঘটনা অতীতে ঘটেছে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, এমন নিষ্ঠুর ঘটনা অত্যন্ত বিরল, সচরাচর এমন ঘটনা ঘটে না। লক্ষণীয় যে, বর্তমানে সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা ও উত্তেজনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর পেছনে অর্থ, জমিজমা ও অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত থাকতে দেখা যাচ্ছে। অভাব অনটন ও জীবন যন্ত্রণা মানুষের এই সমস্যা ও সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অনেক অমানবিক নিষ্ঠুর কর্মকান্ড সংঘটন করছে। উপরের ইভা হত্যার পেছনে হয়তো এমনি কোন বিষয় জড়িত, যাতে ছোট বোনের প্রতি মায়া মমতা ও ¯েœহ পরাভূত হয়েছে, হারিয়ে গেছে অসীম শূন্যতায়। এমন নিষ্ঠুর ঘটনা শুধু অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দানের মাধ্যমেই সুরাহা বা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সমাজে মূল্যবোধের অনুশীলন বাড়ানোর কাজে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষিত ও সচেতন মহলকে। অন্যথায় এ ধরনের হিংসা ও বিদ্বেষমূলক অমানবিক ঘটনা সমাজ জীবনকে নিক্ষেপ করতে পারে এমন অন্ধকারে, যার সাথে শুধু আইয়ামে জাহেলিয়াতেরই তুলনা করা যায়।