পশ্চিমা মিডিয়ার নির্লজ্জ পক্ষপাত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ৯:১৮:২০ অপরাহ্ন
নিউইয়র্কভিত্তিক মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এমএসএনবিসি থেকে তিনজন মুসলিম সাংবাদিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট সিমফোরে জানানো হয়েছে, তিন উপস্থাপক আয়মান মোহেলদীন, মেহেদি হাসান ও আলী ভেলসিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এই মার্কিন গণমাধ্যমটি আয়মান মোহেলদীনের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার জন্য নতুন উপস্থাপক নিয়োগ করেছে। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার মেহেদি হাসানের নির্ধারিত শো’টি সম্প্রচার করা হয়নি। এছাড়া অপর সাংবাদিক আলি ভেলসির চলতি সপ্তাহের অনুষ্ঠান অন্য কোন উপস্থাপক উপস্থাপনা করবেন বলে জানানো হয়েছে।
গাজায় ইসরাইলীদের নৃশংস গণহত্যার বিপক্ষে বিশেষভাবে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এই মুসলিম সাংবাদিকদের বরখাস্ত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমএসএনবিসি’র এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এমন দু’টি সূত্রের সাথে সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে তাদের এই নির্লজ্জ পক্ষপাত। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মার্কিন সাংবাদিক অ্যালান ম্যাকলিও এক্সে বলেন, এই ঘটনা যদি চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোন শত্রু রাষ্ট্রে হতো, তাহলে তা বিশ্বব্যাপী পত্রিকার শিরোনাম হতো।
লক্ষণীয় যে, আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর অধিকাংশই ইহুদী কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক পাশ্চাত্যের খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোক। যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনসহ পশ্চিমা সকল দেশেই এটা লক্ষণীয়। ফলে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমান কিংবা তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম ও লড়াইয়ের সংবাদগুলো প্রায়শ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে থাকে। বিগত কয়েক যুগ ধরেই এটা চলছে। ইতোমধ্যে সাংবাদিকসহ বহু পেশাজীবী চাকুরীজীবীকে চাকুরী হারাতে হয়েছে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনীদের সমর্থন করার দরুন এবং ফিলিস্তিনের ব্যাপারে সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ ও সম্প্রচারের জন্য। এছাড়া ইহুদী ও কট্টরপন্থী খৃষ্টানদের সমালোচনার কারণে অনেক নিরপেক্ষ মিডিয়াও ফিলিস্তিনের ব্যাপারে সত্য ও সঠিক সংবাদ প্রকাশ ও ভাষ্য প্রকাশ বা প্রচার থেকে বিরত রয়েছে। এভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত ফিলিস্তিনীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও আন্দোলন সংগ্রাম চাপা পড়ে যাচ্ছে, চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের দুর্ভোগ ও আহাজারি। এমনকি তাদের পক্ষে কথা বলা কিংবা সমর্থনের দায়েও চাকুরী হারাতে হচ্ছে মুসলিম ও অন্যান্য নিরপেক্ষ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী লোকজনকে। উপরের এমএসএনবিসি টিভির তিনজন খ্যাতিমান মুসলিম উপস্থাপককে বিনা অপরাধে চাকুরীচ্যুত করার ঘটনা এর নিকৃষ্ট উদাহরণ।
দীর্ঘদিন যাবৎ একটি বিষয় লক্ষণীয়। পশ্চিমা শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলো নিজেদের সৎ ও নিরপেক্ষ বলে দাবি করলেও ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সংক্রান্ত সংবাদ বা ভাষ্যের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সুকৌশলে ইসরাইলের পক্ষ নিতে দেখা যায়। বিভিন্ন শব্দ চয়নেও তাদেরকে পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করতে দেখা যায়। এছাড়া তারা দখলদার সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল দেশটির নিপীড়ক জনগণ ও সৈন্যদের নৃশংসতাকে আত্মরক্ষার্থে পদক্ষেপ এবং মুক্তিকামী প্রতিরোধযোদ্ধা হামাসসহ অন্যান্য সংগঠনের তৎপরতাকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে আখ্যায়িত করে আসছে যুগ যুগ ধরে। যা নিরপেক্ষ বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতার যেমন পরিপন্থী তেমনি অমানবিক। আমরা গাজাবাসীসহ সকল নির্যাতিত নিপীড়িত ও বাস্তুহারা ফিলিস্তিনীদের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরাসহ তাদের ন্যায়সংগত সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ও সোচ্চার হওয়া সকল মিডিয়াকর্মীর নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। আমরা সত্যের পক্ষে সকল সাংবাদিককে অবস্থান গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।