সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা কমেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৫৭:৩৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিমাসে যে পরিমাণ মামলা হতো সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশ হওয়ার পর গত এক মাসে দেশে সেই তুলনায় এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কমেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিদিন গড়ে ৪টি করে মামলা হতো। তবে গত এক মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইনে ঢাকায় মামলা হয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে ১২টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে এবং দু’টি মামলা হয়েছে থানায়।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এক মাসের চিত্র দেখে এখনই পরিস্কার ধারণা করা কঠিন যে মামলার সংখ্যা তুলনামূলক কম না বেশি হচ্ছে। এই আইনের ৪২ ধারা নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়ে গেছে বলেও মত তাদের।
প্রথম এক মাসে ঢাকায় যে ১৪টি মামলা হয়েছে তার বেশিরভাগই মানহানি সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে। এছাড়া প্রতারণা ও হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনায়ও কিছু মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মানহানি সংক্রান্ত মামলা বেশি হয়েছে। প্রতারণার ও হ্যাকিংয়ের ঘটনায়ও অনেক মামলা হয়েছে।
আগের আইনটি থেকে বর্তমান আইনটিতে কাজ করতে গিয়ে কী পার্থক্য দেখছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘প্রথমত, আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, আগে মামলাগুলো বেশি হতো থানায়। এখন মামলা বেশি হচ্ছে আদালতে। আবার তদন্ত না করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আগে যেখানে অভিযোগ করলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা হতো, এখন সেই অবস্থাটি আর নেই। আবার সরকার বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মানহানি সংক্রান্ত অনেক বেশি মামলা হতো। কারণ, একজনের পক্ষে আরেকজন মামলাটি করতে পারতেন। এখন যার মামলা তাকেই করতে হয়। পাশাপাশি জামিনের সুযোগ থাকা এবং অর্থদণ্ড দিয়ে শাস্তি মওকুফ পাওয়ার সুযোগও আছে। ফলে যারা মামলা করতেন তারা অনেক ক্ষেত্রেই আগ্রহ হারিয়েছেন।’
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিত করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হয়। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলাগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগে মামলাগুলো করেছেন ভুক্তভোগীরা।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর থেকে দেশে এই আইনে সাড়ে ৭ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। সেই হিসেবে, প্রতিদিন গড়ে মামলা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪টি। সাইবার নিরাপত্তা আইনে সে হিসেবে মামলার সংখ্যা কম।
গত এক মাসের চিত্র দেখে কী মনে হচ্ছে? সাংবাদিকদের যে উদ্বেগ ছিল সেটা কী আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারা নিয়ে আমরা তো আপত্তি জানিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে তো উদ্বেগ আছে। তবে আশার কথা এই আইনে এখনও সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়নি।’
মামলার সংখ্যাও তো অনেক কমেছে? এটা কী আশার কথা নয়- এমন প্রশ্নের জবাবে দীপ আজাদ বলেন, ‘মামলা কমার একটি কারণ আমার মনে হয়, আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে একটি ধারা যুক্ত করতে অনুরোধ করেছিলাম। সেটা তিনি রেখেছেন। এই আইনে কেউ মিথ্যা মামলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। আমার মনে হয়, মামলার সংখ্যা কমার পেছনে এটি অন্যতম কারণ হতে পারে। কারণ যারা ভুয়া মামলা করতেন তারা এখন আর সাহস পাবে না। এই দিক দিয়ে আমাদের জন্য খানিকটা হলেও স্বস্তির।’
সাইবার নিরাপত্তা আইনের গেজেট প্রকাশের সাত দিনের মাথায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা করেন কেরানীগঞ্জের এক নারী। তার অভিযোগ, ফটোশপের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের এক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে তার ছবি জুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করে তার সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে যে ১২টি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে ৬টির বাদী নারী।
সাইবার নিরাপত্তা আইন হওয়ার পর গত এক মাসের চিত্র দেখে কী মনে হচ্ছে? জানতে চাইলে সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘একটা আইন হওয়ার পর এক মাসের চিত্র দেখে কিছুই বোঝা যাবে না। আইনটি বুঝতে পুলিশের সময় লাগে। এমনকি আইনজীবীদেরও সময় লাগে। এই অবস্থা যদি ৬ মাস পরও দেখা যায়, তাহলে আমরা বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখব।’
সামনে নির্বাচন এবং এ কারণে কী সরকার আইনটি প্রয়োগ করার ব্যাপারে একটু বেশি সতর্ক কি না জানতে চাইলে এই আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিষয়টি আমার কাছে এমন মনে হয় না। সরকার যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচনটি করতে চায় সেখানে যেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে তার বিরুদ্ধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা নেবে। এখন সাংবাদিকরা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে এই আইন প্রয়োগের ব্যাপারে সরকার নমনীয় হবে বিষয়টি আমার কাছে এমন মনে হয় না।’