কোন পথে দেশের অর্থনীতি?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩০:২৯ অপরাহ্ন
প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার অপর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের অর্থনীতি যখন উন্নত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। রিজার্ভের আশংকাজনক পতন, টাকার মূল্যমান হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ভারতীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানীয় মুদ্রা রুপীর মান শক্তিশালী হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দেশটির অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ তৈরী হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক বেশ কিছুদিন যাবৎ ভালো অবস্থার ইংগিত দিচ্ছিলো। সর্বশেষ গত শুক্রবার তা বৃদ্ধি পেয়ে গত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ঐদিন পাকিস্তানের কেএসই-১০০ সূচক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে পৌঁছেছে। ফলে ব্লুমবার্গ অনুসরণ করে বিশ্বের এমন ৯০টির বেশী সূচকের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা হয়েছে দেশটির শেয়ার বাজারের সূচক।
পাকিস্তানী অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহের মতে, পাকিস্তানী রুপির সাম্প্রতিক পুনরুদ্ধার, সেকেন্ডারি ঋণের বাজারে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির বর্তমান অবস্থা-তিনটি বিষয়ই বিনিয়োগের জন্য নতুন তহবিল ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। ৬ বছর পর কেএসই-১০০ সূচক ৫০ হাজার পয়েন্টের ওপরে যাওয়ায় এই বাজার ইতিবাচক থাকবে আশা করা যায়।
বলা বাহুল্য, দেউলিয়া অবস্থা থেকে শ্রীলংকা বর্তমানে ওঠে এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে মিডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে মূল্যস্ফীতির গতি গত বছরের তুলনায় কমেছে। মূল্যস্ফীতি এখন এক ডিজিটের ঘরে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করেছে। রিজার্ভও বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে শ্রীলংকার রুপী অনেকটা শক্তিশালী হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের অনেকে শ্রীলংকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোকে জাদু হিসেবে দেখছেন।
আর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের মুদ্রা সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে। আফগানিস্তানের তালেবান শাসকদের গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। চলতি বছর আফগান মুদ্রা আফগানির মান ১৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য মতে, উত্তর আফগানিস্তানে গড়ে ২৯০ শত কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত খনিজ তেল ও ১৫.৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ আছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা পেন্টাগণের একটি গোপন চিঠিতে বলা হয়, আফগানিস্তানের ‘লিথিয়ামের সৌদি আরব’ এ পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ তেল যেভাবে সৌদী আরবের অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে, তেমনি লিথিয়াম ও আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে। দূষণহীন যান চলাচলের ব্যাটারি, মোবাইল ফোনের ব্যাটারির জন্য আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে কাংখিত খনিজ হচ্ছে লিথিয়াম মৌল।
অপরদিকে বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থাও ক্রমশঃ ভালো হচ্ছে। বর্তমানে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ ৫৯০ বিলিয়ন পাউন্ড। বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা সমস্যা সত্বেও ভারত এখন অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ। সম্প্রতি আমেরিকান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক গোল্ডম্যান ম্যাক্স একটি প্রতিবেদন বলেছে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ভারত যে শুধুমাত্র জার্মান ও জাপানকেই হারিয়ে দেবে তা নয়, একই সঙ্গে ভারত আমেরিকাকেও অতিক্রম করে যাবে।
যা-ই হোক, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলো যখন এভাবে ক্রমশঃ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম। রিজার্ভ কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় নামার উপক্রম হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি যেমন অস্বাভাবিক বেশী, তেমনি দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন মহামারি ও যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখন বাংলাদেশ ক্রমশঃ পিছিয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এর কারণ কী? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। আসছে জাতীয় নির্বাচন। উত্তপ্ত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এটাও দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন মহল এখন অন্ধভাবে ক্ষমতায় যাবার চেষ্টায় মগ্ন। দেশের অর্থনীতি তাদের কাছে মূখ্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে আগামীর বাংলাদেশ তথা এর অর্থনৈতিক অবস্থা কী দাঁড়াবে, এ নিয়ে শংকিত সচেতন মহল।