দুর্নীতির পরাকাষ্ঠা বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:২০ অপরাহ্ন
গতকাল জাতীয় মিডিয়ায় ‘এক মাসে টোল আদায় সাড়ে ৪ কোটি, রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় ৭১ কোটি টাকা’ শিরোনামে একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হয় গত ২৮ অক্টোবর। পরদিন থেকে শুরু হয় যান চলাচল। ২৯ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ টানেল বা সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করা যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর এ সময়ে টানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৭১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। টানেলটির নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
লক্ষণীয় যে, চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করেছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকার চীনা ঋণ ২ শতাংশ সুদসহ আগামী ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। টানেলের নির্মাণ ব্যয় তুলে আনাসহ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলে আনার একমাত্র মাধ্যম যানবাহন থেকে আদায় হওয়া টোল।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেল বা সুড়ঙ্গপথটি নির্মাণ করা হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেনবিশিষ্ট দু’টি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে একটি ৭২৭ মিটার ফ্লাইওভার তৈরী করা হয়েছে।বলা বাহুল্য, বর্ণিত কর্ণফুলী টানেলের আয় ও ব্যয়ের এই আকাশ পাতাল তফাতের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নানা ব্যাখ্যা ও বিবরণ উপস্থাপন করেছেন। বলেছেন, প্রথম দিকে ব্যয় একটি বেশী হবেই, অনেক নতুন সরঞ্জাম ও কেনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তা-ই বলে এই তফাৎ এ ধরনের আকাশ-পাতাল হবে কেনো। কোথায় ৪ কোটি, আর কোথায় ৭১ কোটি। স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে, ‘ডালমে কুচ কালা হ্যায়’।
অনেকের মতে, যে দেশে একটি বালিশ ২/৩ তলায় তুলতে হাজার/বারোশ’ টাকা খরচ দেখানো হয়, সেদেশে একটি বিশাল টানেল রক্ষণাবেক্ষণে ১ কোটি টাকার ব্যয়কে ৭১ কোটি টাকা প্রদর্শন করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেকের অভিযোগ, কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ ধরনের বড় বড় প্রকল্প তৈরীর পেছনে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতসহ এর রক্ষণাবেক্ষণের নামে কয়েক যুগ ধরে এভাবে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা লুন্ঠনের অসৎ অভিপ্রায় রয়েছে। শুধু কর্ণফুলী টানেলই নয়, এ ধরনের আরো বহু প্রকল্পে একই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে এসব প্রকল্পের জন্য গৃহীত বিদেশী ঋণের সুদাসল পরিশোধের ভার এদেশের সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ঋণের এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে।
চলতি বছরের শুরুতে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি আরও বাড়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। অনেকের মতে, এভাবে চললে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ যে টপ টেন এ স্থান পাবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। টিআইবি বলেছে, তালিকায় ১০০ স্কোরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর প্রাপ্তির স্কোর অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪৭তম। আগের বছরও একই অবস্থানে ছিলো বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান কেবল আফগানিস্তানের ওপরে। তবে ধারণা করা হচ্ছে ইতোমধ্যে আফগানিস্তান সব দিক দিয়ে উন্নতি ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাই এদিক দিয়ে দেশটি অচিরেই ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশকে অর্থাৎ বাংলাদেশ হয়ে ওঠবে দুর্নীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশ। আর যদি তা-ই হয়, তবে সেটা হবে এদেশের ১৮/১৯ কোটি মানুষের জন্য চরম লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির এ লাগাম টেনে ধরবে কে?