মাটির তলদেশে সুসংবাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৫:২১ অপরাহ্ন
সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, সিলেট অঞ্চলের মাটির নীচ থেকে অনেক ভালো খবর আসছে। সিলেট হলো পূণ্যভূমি। এখানকার গ্যাস ও তেল জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে সিলেটে আরো নতুন কূপের সন্ধান মিলবে, এখানে নতুন কূপ খননও চলছে। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য যেমন আশাসঞ্চারী তেমনি অনুপ্রেরণাদায়ী।
বাংলাদেশ বিশেষভাবে সিলেট অঞ্চলের ভূগর্ভে প্রচুর পরিমাণ তেল-গ্যাসের মজুদ আছে, এমন ধারণা ও বিশ্বাস এদেশের সকল সচেতন মানুষের। এই ধারণা যে অমূলক নয়, এর প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে মাঝে মধ্যেই। শুধু সিলেট বিভাগ নয়, দেশের আরো বহু স্থানসহ সমুদ্রেও বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস মজুত রয়েছে, এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
জানা গেছে, দেশে জ্বালানী, তেল গ্যাস ও খনিসম্পদ অনুসন্ধানে প্রচেষ্টা জোরদার করেছে সরকার। সমতল, পার্বত্য এবং সমুদ্রে জ্বালানীর সন্ধানে অনেকগুলো প্রকল্প ও প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে দেশের স্থলভাগে ৪৬ টি কূপ খনন কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৫ টি অনুসন্ধান, ১৫ টি উন্নয়ন এবং ১৬টি সংস্কার কূপ। ইতোমধ্যে ১৬টি কূপ খননের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সম্পন্ন করেছে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
পার্বত্য অঞ্চলে ১০টি স্থানে গ্যাস-খনিজ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানী গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানী (বাপেক্স)। আর দেশের ইতিহাসে এখনো গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান করতে না পারার আক্ষেপও দূর হতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এক্সন মোবিলের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে সরকার।
এদিকে দেশে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তথ্যের ঘাটতির কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞ ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা। সে তথ্যের জোগান দিতে ২০২০ সালে বঙ্গোপসাগরের গভীর ও অগভীর ব্লকগুলোতে মালটিক্লায়েন্ট সিয়মিক সার্ভে (ভূকম্প জরিপ) শুরু করে নরওয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানী টিজিএস-নোপেক এবং শ্লম্বার্জার। লক্ষণীয় যে, গ্যাস ও খনিজ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিবেচনা করে দেশের স্থলভাগকে ২২টি এবং সমুদ্রভাগকে ২৬ টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। এই ২৬টি ব্লকের মধ্যে ১১টি অগভীর সমুদ্রে অবস্থিত। বাকী ১৫টি গভীর সমুদ্রে। এখন পর্যন্ত শুধু অগভীর অংশের ২ টি ব্লকে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে একটি বিদেশী কোম্পানী। সম্প্রতি গভীর সমুদ্রের ১৫ টি ব্লকের সবগুলোতে অনুসন্ধানের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে জ্বালানী খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানী যুক্তরাষ্ট্রের এক্সন মোবিল।
একথা অনস্বীকার্য যে, দীর্ঘদিন এদেশে তেল গ্যাসসহ খনিজ সম্পদ আহরণে সরকারী পর্যায়ে উদ্যোগ ছিলো অপর্যাপ্ত। বিগত বছরগগুলোতে এ ধরনের অনুসন্ধান কার্যক্রম ছিলো অবহেলিত। এর ফলে রুশ-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে। এ সময় দেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। এছাড়া দেশে ক্রমবর্ধমান ডলার সংকটের কারণে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে এলপিজি সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তেল গ্যাস অনুসন্ধান অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে পেট্রোবাংলাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমূহের কাছে। আমরা দেশের এই তেল-গ্যাস ও ডলার সংকটের সময় নতুন নতুন তেল ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আবিষ্কারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে ক্ষমতার শীর্ষ মহলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।