আরো শিলাবৃষ্টির আশংকা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩০:২৬ অপরাহ্ন
আবহাওয়া অফিসের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এই গরমের সময় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত কাম্য হলেও শিলাবৃষ্টি মোটেও প্রার্থিত নয়। কিছুদিন আগের প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টিতে সিলেট অঞ্চলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা অনেক লোকজন এখনো কাটিয়ে ওঠতে পারেননি। আর সেই ক্ষয়ক্ষতি যে অতীতের ন্যায় শুধু ফসল ও শাকসবজির ক্ষেত্রে হয়েছে, তা নয়, মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে ঘরের টিনের চালার। বড় বড় শিলা, যা আধ কেজি পর্যন্ত ওজনের এসে পড়েছে টিনের চালায়। এতে শত শত বাড়িঘরের চালা ফুটো এমনকি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে শিলার আঘাতে। কিছুদিন আগে সিলেটে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে যে আকারের শিলাবৃষ্টি হয়েছে তা প্রচুর আলোচনার জন্ম দেয়। স্থানীয়দের দাবি এতো বড় আকারের শিলাবৃষ্টি খুব কমই দেখেছেন তারা। তবে আবহাওয়াবিদরা এটাকে অস্বাভাবিক আকারের বলে মনে করছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, শিলাবৃষ্টি হলো কঠিন বরফের সমন্বয়ে এক প্রকার বৃষ্টিপাত। যা বজ্রঝড়ের উর্ধ্বমুখী স্রোতের ভেতর তৈরি হয়।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এদেশে চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরুতে দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বায়ুর প্রভাবে কালবৈশাখী হয়। তখন বাতাসে এক ধরনের উর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি হয়। সে কারণেই কালবৈশাখী হয়। আর এর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দমকা হাওয়া, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণিত ওয়েবসাইটে আরো বলা হয়েছে, বাড়িঘর গাড়ি এমনকি মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে শিলাবৃষ্টি। ওয়েবসাইটে শিলাবৃষ্টির শিলার সৃষ্টি বা গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন বৃষ্টির ফোঁটা বজ্রঝড়ের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের অন্যতম ঠান্ডা জায়গায় উর্ধ্বমুখী হয় এবং জমাট বাঁধে তখন শিলাবৃষ্টি তৈরী হয়। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শিলাবৃষ্টির প্রধান শর্ত প্রচ- গরম। বাংলাদেশে চৈত্র বৈশাখ মাসে এ রকম গরম পড়ে। ফলে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে যে কালবৈশাখী ঝড় হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই শিলাবৃষ্টি হয়। এ সময় ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু মন্ডলের কোথাও কোথাও ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। ওই সময় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে দখিনা বাতাস আসতে পারে। তার সঙ্গে যোগ হয় বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের তাপীয় লঘু চাপ। একই সাথে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পে পূর্ণ আর্দ্র বাতাস যুক্ত হয়। এই দু’টির সাথে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অপেক্ষাকৃত শীতল বাতাসের সংমিশ্রণে মেঘমালা তৈরী হয়। এগুলো ভুপৃষ্ঠের ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ওপরে ওঠে যায়। জলীয় বাষ্প ওপরে ওঠে আরো ঠান্ডা হয়ে যায় এবং ছোট ছোট বরফ কণায় পরিণত হয়। এই ছোট বরফকনা আশপাশের আরও বরফখন্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং শিলাখ-ে পরিণত হয়। শিলাখ- যখন ভারী হয়ে যায় তখন এর ওজনকে আর বায়ুমন্ডল ধরে রাখতে পারে না। এগুলো শিলাবৃষ্টি আকারে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসিকে বলেন, সিলেটে যে আকারের শিলাবৃষ্টি হয়েছে, তা অস্বাভাবিক আকারের নয়। এর আগে ২০১৫ সালে সাতক্ষীরায় শিলাবৃষ্টিতে ৫ হাজার পাখি মারা যায়। সিলেট বিভাগের সহকারী আবহাওয়াবিদ বলেন, শিলাবৃষ্টির সাইজ যে কোন আকারের হতে পারে। এর চেয়ে বড় শিলাবৃষ্টিও হয়। রোববার হাফ ইঞ্চি ব্যাসার্ধে এক ইঞ্চি বৃত্ত আকারের শিলা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা সম্প্রতি সিলেটে হওয়া শিলাবৃষ্টির যে আকার রেকর্ড করেছেন, তা মোটেই সঠিক নয়। এবারের শিলাবৃষ্টির শিলার আকারও অস্বাভাবিক। শিলাবৃষ্টির পর পরই অনেকে শিলা বা বরফখন্ডের ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন, যা আবহাওয়াবিদদের বর্ণিত শিলার চেয়ে অন্ততঃ দশগুণ বড়। আর এজন্যই সিলেট অঞ্চলে টিনের চালাযুক্ত বাড়িঘরের এতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শত শত বাস, সিএনজি অটোরিক্সা ও কারের গ্লাস ভেঙ্গেছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। দরিদ্র ও সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি ছিলো শুধু দুঃখজনক নয়, রীতিমতো হৃদয়বিদারক। অনেক অর্থব্যয়ে ঘরের চালা ঠিকঠাক এমনকি সম্পূর্ণ না বদলানো পর্যন্ত তাদেরকে বৃষ্টি বাদলা মাথায় নিয়ে দিনরাত কাটাতে হয়েছে। অনেক প্রবাসী এবং দানশীল ব্যক্তি ও সংগঠন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে আজো হয়তো তাদের ফুটো হওয়া বা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়া চালার বসবাস করতে হতো। এই অভাবনীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে সিলেটসহ দেশের শিলাবৃষ্টি প্রবণ অঞ্চলের বাড়িঘরে ঢেউটিন জাতীয় শীটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের চালা বা এ ধরনের অন্য কিছু ব্যবহার করা উচিত। আর বাড়িঘর তৈরীর ক্ষেত্রে এখন থেকেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনোযোগী হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। কারণ আগামী দিনগুলো ভারী শিলাবৃষ্টির সংখ্যা ও পরিমাণ কমার চেয়ে বাড়ার আশংকা রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে তা আরো যে তীব্র হয়ে ওঠতে পারে, এমন আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।