বিপজ্জনক খাদ্যপণ্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘বিশ্বের দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতীয় খাদ্যপণ্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এক বছর আগে আফ্রিকায় ভারতীয় একটি ওষুধ কোম্পানীর সর্দিজ্বরের সিরাপ পানের পর ১৪০ শিশুর প্রাণহানি ঘটে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ভারতীয় কোম্পানীগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত এপ্রিলে হংকংয়ে ভারতীয় ওই দুই কোম্পানীর গুঁড়া মশলায় ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়ার তথ্য জানানো হয়। পরে মাছ রান্নায় ব্যবহৃত ভারতীয় এমডিএইচের তিন ধরনের গুঁড়া মশলা ও এভারেস্টের একটি গুঁড়া মশলার বিক্রি স্থগিত করে হংকং।
দেশটির বিখ্যাত গুঁড়া মশলার প্রস্তুতকারক দুই প্রতিষ্ঠান এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেসের মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ইথিলিন অক্সাইড পাওয়ায় ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তদন্ত শুরু হয়। এরই মধ্যে এশিয়ায় সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বাজার থেকে এই দুই ভারতীয় কোম্পানীর মশলা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ এমডিএইচ ও এভারেস্টের মশলার মান নিয়ে সতর্ক সংকেত জারি করায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যা- এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এসব দেশে ওই দু’টি কোম্পানীর পণ্য সামগ্রীতে রাসায়নিকের উপস্থিতি আছে কি-না তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভারতের মশলা রপ্তানি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রায়াত্ত্ব সংস্থা ইন্ডিয়া স্পাইস বোর্ড বলেছে, দেশভেদে মশলা পণ্যে অক্সাইড ব্যবহারের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ভারতে কৃষি চাষাবাদে কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। আর এসব কীটনাশকের উপস্থিতি প্রায়ই খাদ্যপণ্যে পাওয়া যায়। চাষাবাদে কীটনাশক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থার্ড আইসাইটের সিইও বলেন, আমাদের কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ভারতের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫২৭ টি পণ্যে ইথিলিন অক্সাইড খুঁজে পেয়েছে। এগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। ভারতে তৈরী মশলায় উচ্চমাত্রার ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কীটনাশক পাওয়ার খবরে শংকায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা।
ইতোমধ্যে ভারতীয় মশলা নিয়ে হংকং ও সিঙ্গাপুরে সচেতনতামূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাদের দাবি, এই মশলায় উচ্চমাত্রার ইথিলিন অক্সাইড পাওয়া গেছে, যা মানুষের খাওয়ার অনুপযুক্ত। দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশ খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্যের বড় বাজার হওয়া সত্বেও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব ক্ষতিকর ভারতীয় পণ্যের ব্যাপারে এ পর্যন্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিভিন্ন মিডিয়ায় এসব ক্ষতিকর মশলাসহ ঝুঁকি সৃষ্টিকারী পণ্য নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠলেও কর্তৃপক্ষ এখনো নীরব। দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেমন এসব বিতর্কিত পণ্য আমদানি এখনো নিষিদ্ধ করেনি, তেমনি গণস্বাস্থ্য বিভাগ ও বাজার থেকে এসব ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী পণ্য প্রত্যাহারের কোন ব্যবস্থা করেনি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।
খাদ্যপণ্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যে গোবর, গোমুত্র ও ইঁদুরের বিষ্ঠা পাওয়ার বেশ কিছু অভিযোগ ওঠেছে ইতোপূর্বে। ভারতের আলীগড়ের জনৈক শিক্ষার্থী একটি মিষ্টি দোকানে সকালে মিষ্টিপণ্যের ওপর গোবরজল ও গোমূত্র ছিটাতে দেখে ভারতে মিষ্টি খাওয়া বর্জনের কথা লিখেছেন সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুকে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দোকানে ইঁদুরের অবাধ বিচরণের চিত্রও প্রকাশিত হয়েছে। অনেকের মতে, গোবর, গোমূত্র ও ইঁদুরকে পবিত্র বিবেচনা করায় ভারতীয় পণ্য বিক্রেতারা খাদ্যপণ্যে এগুলোর উপস্থিতিকে স্বাভাবিক এমনকি অপরিহার্য বলে বিবেচনা করেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে এগুলো সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। ভারত থেকে খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষগুলোর এসব বিবেচনা করা দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।