শুভ প্রত্যাবর্তন বটে !
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৪, ১২:৩৫:৫০ অপরাহ্ন
গতকাল জাতীয় মিডিয়ায় ‘শহর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের সংখ্যা দুই বছরে দ্বিগুণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জীবনমান উন্নয়নের আশায় গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা সব সময় বাড়তে থাকে। করোনা মহামারির সময় সেই সংখ্যা কিছুটা কমলেও পরে আবার তা বেড়ে যায়। তবে গত বছর গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যায় বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারের মধ্যে ৫.৯ জন শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়েছিলেন। আর ২০২৩ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৮ জনে।
লক্ষণীয় যে, ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কেনো বেড়েছে তার পেছনে রয়েছে নানা যৌক্তিক কারণ। শহর থেকে গ্রামে ফেরা অনেকের মতে, শহরে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে শহরে পরিবার নিয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আয়ের সাথে মাসিক ব্যয়ের সামঞ্জস্য কোনভাবেই রাখা যাচ্ছে না। মূলত: এসব কারণে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এ সময়ে শহরের চেয়ে গ্রামে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন যাপন করা যায়। তাছাড়া শিক্ষিত বেকার যুবকরা শহরের চাকুরির পেছনে না দৌড়ে অনেক শিক্ষিক তরুণ যুবক উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তারাই আবার গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন ধরণের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এখন গ্রামে পৌঁছাচ্ছে। গ্রামে এসে অনেকে মাছ চাষ, সবজি চাষ, গরুর খামার, বিভিন্ন ফলমূলের বাগান করছেন।
বলা বাহুল্য, বিগত বছরগুলোতে কিছু শিল্পকারখানা গড়ে উঠলেও বাংলাদেশ এখনো কৃষি নির্ভর দেশ। এর কিছু সুফলও পাওয়া গেছে ইতোমধ্যে। গত আশির দশকের মন্দার সময় ইউরোপের অনেকে ধনী ও উন্নত দেশ দেউলিয়া হয়ে পড়লেও বাংলাদেশে এর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। এক্ষেত্রে এদেশের কৃষি উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশকে নিশ্চিত মন্দা থেকে রক্ষা করেছে। একজন মানুষ যখন মুরগি পোষে এর ডিম ও মাংস খেতে পায়, ধান ও সবজি ফলিয়ে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে, তখন তাকে ব্যাংক ঋণের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলেও তার তেমন কিছু যায় আসে না। দেশে বিদেশি পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হলেও তাকে না খেয়ে উপোস করতে হয় না। ডলারের ঘাটতি দেখা দিলেও কিছুই যায় আসে না তার। বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর হওয়ায় এসব সুবিধা পেয়েছে জনগণ ঐ মারাত্মক মন্দার সময়।
প্রায় অর্ধযুগ আগে বিশ^ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর কাজের জন্য গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকামুখী হতে দেখা গেছে ৫ লাখ মানুষকে। রাজধানীমুখী জন¯্রােত থামছেনা কোন মতেই। এতে শহরে বাড়ছে দারিদ্রের সংখ্যা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে এখন ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা চারগুণ হয়ে প্রায় ২ কোটিতে পৌঁছেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা সাতে ৩ কোটির বেশি হতে পারে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য শহরেও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরমুখী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। পরিস্থিতি যখন এমন তখন সাম্প্রতিক সময়ে শহর থেকে মানুষের গ্রামাঞ্চলমুখী হওয়া একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের জন্য এটা শুভ সংকেত। নানা জটিলতা ও ঘাটতির কারণে এদেশে আশানোরূপ শিল্পায়ন হয়নি। শুধু গার্মেন্টস শিল্প বেশ বিকশিত হয়েছে। আর গার্মেন্টস ছাড়া তেমন কোন অর্থকরী পণ্য নেই যা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আনবে দেশে। এ অবস্থায় দেশের কৃষির উপর গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে এদেশে বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চলে নান ধরণের কৃষি খামার গড়ে তুলছেন বিদেশ থেকে অর্জিত জ্ঞান নিয়ে। অনেক বিদেশি ফলমূলের বীজ এনে দেশে রোপন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। মরুভূমির ফল খেজুর উৎপাদনে এদেশে বিরাট সফলতা লক্ষ্য কার যাচ্ছে। এসবই হচ্ছে গ্রামাঞ্চলকে কেন্দ্র করে, গ্রামের উর্বর মাটি, পানি ও বায়ূকে ব্যবহার করে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের গ্রামমুখী হওয়ার বিষয়টিকে একটি শুভ লক্ষণ বলা যায়। আর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এটাকে উৎসাহিত করা দরকার।
আরেকটি বিষয়, বর্তমানে ঢাকাসহ এদেশের বিভিন্ন শহর ও নগরের পরিবেশ এখন যেভাবে দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে, এমতাবস্থায় শহর ও নগরীগুলোর উপর থেকে মানুষের চাপ হ্রাস একান্ত কাম্য ও আবশ্যকীয়। বর্তমান শহর ছেড়ে মানুষের গ্রামমুখী হওয়ার প্রবণতা এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এমন অভিমত সচেতন মহলের।