কার স্বার্থে এমন উদ্যোগ?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২৪, ১২:৫১:৫১ অপরাহ্ন
একজন দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার নেই, কাজকর্মও নেই তার অর্থাৎ সে বেকার কিংবা অর্ধবেকার। এমন অবস্থায় এলাকার একজন বিত্তশালী ব্যক্তি এসে তাকে বললেন, তুমি তো গরীব মানুষ তোমার ঘরদোরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমি নিজ ব্যয়ে তোমার ঘর পাকা করে দেবো। লোকটি তখন বললো, হুজুর আমার ঘরে তো খাবার নেই, অনাহারে আছি। কাজকর্মও নেই। আমাকে আগে একটু খাবার দিন। আর পারলে একটা কাজ যোগাড় করে দিন। একথা শুনে ঐ বিত্তশালী ব্যক্তি বললেন, এসব প্যানপ্যানানি রাখো। আগে তোমার ঘর পাকা হোক। খবর নিয়ে জানা গেলো, ঐ লোকটি এলাকার কিছু দরিদ্র লোককে বাড়িঘর তৈরী করে দেয়ার কথা বলে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এখন দু’চার জনের ঘরদোর পাকা করে দিয়ে বাকী অর্থ আত্মসাতের ধান্ধায় আছেন তিনি। দরিদ্র মানুষের খাবারের ব্যবস্থা কিংবা কর্মসংস্থানের কাজে অর্থ ব্যয়ে তার তেমন কোন লাভ হবে না, বরং বাড়িঘর পাকা করতে গিয়ে তার মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতের সুযোগ রয়েছে ভেবে তিনি এ ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। এই ঘটনাটি মনে এলো বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘সরকারের নিম্ন আয়ের ও বস্তীবাসীদের জন্য আবাসন প্রকল্পের উদ্যোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি পাঠের পর।
দেশের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মানুষ যখন বেকার এবং ধার দেনা করে অন্ন সংস্থান করছে, পুষ্টিকর খাবার খেতে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এমনকি অনেকে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, তখন সরকারের উপরোক্ত উদ্যোগটি সংশ্লিষ্ট লোকজনের এ মুহূর্তে কতোটুকু জরুরী এবং তাদের কতোটা উপকারে আসবে এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তার অবকাশ রয়েছে।
জানা গেছে, সারাদেশের বিভিন্ন শহরে নিম্ন আয়ের বিশেষ করে বস্তীবাসীদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত এ সভায় নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরী ও তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।
লক্ষণীয়, প্রথম পর্যায়ে ১৭ টি ১৫তলা বিশিষ্ট ভবনে ২১৪২ টি আবাসিক ফ্লাট নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৭ টি ভবনে ৫৯২২ টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৩৬ টি ভবনে ৫৪৩৬ টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। সভায় প্রাথমিকভাবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় টঙ্গীর দত্তপাড়ায় ৩ টি পর্যায়ে ১শ’টি বহুতল ভবনে যে ১২ হাজার ৬শ টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নবীরুল ইসলাম। উপরোক্ত প্রকল্পটি যে একটি মহতী উদ্যোগ এতে কোন সন্দেহ নেই। গত কয়েক যুগ ধরে দেশে নিম্ন আয়ের মানুষ ও বস্তীবাসীর আবাসনের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ বা প্রকল্পের দাবি জানিয়ে আসছেন দেশের সচেতন মহল। এ নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে খাদ্যখাতে মূল্যস্ফীতি যখন অত্যধিক অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক, তখন দরিদ্র মানুষের আবাসনের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় কতোটুকু যৌক্তিক ও অগ্রাধিকার ভিত্তিক, তা পর্যালোচনা ও বিবেবচনা করা অত্যন্ত জরুরী। যখন খাদ্যপণ্যে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি, এবং দেশে বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি, তখন এতো বিপুল অর্থব্যয়ে গৃহ নির্মাণ না প্রথমে করে দরিদ্র মানুষের অন্ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কি প্রথম অগ্রাধিকার নয়, এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।
এদেশের কর্তৃপক্ষ যদি গরীব মানুষের জন্য আগে খাবারের ব্যবস্থা না করে তাদের ঘরদোর পাকা করার উদ্যোগ নেন, তবে উপরে উল্লেখিত বিত্তবান ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্যের সাথে মিলে যায়। তাহলে এমন খাদ্যাভাব ও কর্মসংস্থানের অভাবের সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দরিদ্রদের জন্য ভাড়াভিত্তিক পাকা ঘর নির্মাণের প্রকল্পের পেছনে কি বিপুল সরকারী অর্থ লুটপাট ও আত্মসাতের দুরভিসন্ধী লুকিয়ে আছে? এমন প্রশ্ন এখন দেশের জনগোষ্ঠীর।