সংকটের আবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৪, ১২:৩০:৪৭ অপরাহ্ন
দেশের রিজার্ভ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত দশা নিয়ে ইতোমধ্যে মিডিয়ায় বহু সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই বিষয়গুলো এখন ‘টপিক্স অব দ্য মিডিয়া’ বললে ভুল হবে না। শুধু মেইনস্ট্রিম মিডিয়া নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এসব বিষয় বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের জনৈক গ্রাহক একটি ব্যাংকের বিষয়ে লিখেছেনঃ আইসিবি ইসলামী ব্যাংক-মৌলভীবাবাজার শাখায় গিয়েছিলাম টাকা উঠাতে। ব্যাংক থেকে বললো, ক্যাশ সংকট। টাকা দিতে পারবে না। জানতে চাইলাম কত দিন ধরে এই অবস্থা? উপস্থিত গ্রাহকরা জানালেন, দুই মাস ধরে এই অবস্থা। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কিছুই করণীয় নেই। যতো পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংকই আমাদের এই অবস্থার মধ্যে ফেলেছে।
মহসীন বখত নামক জনৈক ব্যক্তির মন্তব্য হচ্ছে, রিজার্ভেও টাকা নেই। সব চালান হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ক্ষমতা কেন্দ্রে এই শক্তিধর মাফিয়া চক্র সক্রিয়। হাওর কাউয়া দীঘিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে মৌলভীবাজারে প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুরু হবে। এটা কেবল দেশের টাকা হরিলুটের জন্য নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের গুনধর মাফিয়া ইয়াবা বদির কাউয়া দীঘিতে জমি কেনার সংবাদ নিশ্চয় জানো। কেন্দ্রের সেরা গৌসকুতুব দরবেশ মাফিয়া চক্র তাদের ছোট ছোট পোনা ছেড়ে দিয়ে এই অঞ্চলকে আগে করতলে নেয়ার ষোলকলা পূর্ণ করছে। ব্যাংকগুলো এখন সিক্রেটভাবে কার্যত: দেউলিয়া, কিছুদিন পরে কোন কোন ব্যাংক নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। সফিকুর রহমান সবুজ লিখেছেনঃ বাংলাদেশ ব্যাংক নামে মাত্র একটা দায়িত্ব নিয়ে আছে, যাদের কাজ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেওয়া। উত্তম বিশ্বাস বলেন, এস আলম গ্রুপকে লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছিলো? কিছুদিনের মধ্যে ব্যাংকটি কো-অপারেটিভ এ পরিণত হতে পারে। আব্দুর রব ভুট্টো লিখেছেনঃ শুধুমাত্র দেউলিয়া ঘোষণা বাকি। এছাড়া গতকাল শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রিজার্ভের এক ভীতিকর অবস্থা ফুটে ওঠেছে। ‘ডলার সংকট: ঠেকানো যাচ্ছে না রিজার্ভের পতন’ শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও রিজার্ভ কমেই চলেছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আশংকাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। দুই বছর আগে শুরু হওয়া ডলারের সংকট কাটছে না। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে সাম্প্রতিক যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো, সেগুলো রিজার্ভ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। ডলারের সংকট না কাটায় রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না, বরং প্রায় প্রতিনিয়তই কমছে রিজার্ভ। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রই এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আবারো রিজার্ভ চুরির একটি তথ্য প্রকাশ করেছে একটি ভারতীয় মিডিয়া। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক তা অস্বীকার করে বলেছে, সংবাদটি ভুয়া। তবে এতে এদেশের সচেতন মহলের সন্দেহ কাটছে না। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে দশা এ অবস্থায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আশ্চর্যের কিছু নয়।
অনেকের মতে, দেশে ডলার এবং রিজার্ভ সংকট সৃষ্টির পেছনে ডলার পাচার ও বিদ্যুৎ খাতে অপচয় বিশেষভাবে দায়ী। বিদ্যুতের জন্য অন্যায় ও অসম চুক্তির দরুণ ইতোমধ্যে আদানিকে নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে হাজার হাজার কোটি ডলারে শোধ করতে হয়েছে। আর এই অর্থে এবার ভারতীয় আদানি গ্রুপের মুনাফা দ্বিগুন হয়েছে। অপরদিকে ডলার সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার এদেশে কর্মরত তাদের দেশীয় কোম্পানীগুলোর পাওনা পরিশোধের জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। এভাবে চতুর্মুখী চাপে পড়ে রিজার্ভ যেমন তলানীতে নেমে এসেছে তেমনি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থাও ভয়াবহ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সদিচ্ছা নিয়ে আশু সুষ্ঠু ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। তবে কথা হচ্ছে, সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো যায়। কিন্তু সেই সর্ষেতেই যদি ভূত থাকে তবে কে তাড়াবে তাকে? সরকারের নীতি নির্ধারক শীর্ষমহলে যদি এসব সংকটের কারণ নিহিত থাকে, তবে কীভাবে দূর হবে এসব সমস্যা ও সংকট?